পোশাক খাতের বিক্ষোভ শ্রম অধিকার রক্ষার আন্দোলনের স্বীকৃতি পাবে না: জাতিসংঘে আইনমন্ত্রী
জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (বাংলাদেশ)-এর ৪৪ তম অধিবেশনের ভাষণে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বিক্ষোভকে শ্রমিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না — কারণ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এ বিক্ষোভকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।
'বর্তমান শ্রম অসন্তোষের মধ্যে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বানচাল করার লক্ষ্যে একটি সূক্ষ্ম প্ররোচনা দেখতে পাচ্ছি... এ ধরনের কর্মকাণ্ড শ্রম অধিকার রক্ষার আন্দোলন হিসাবে স্বীকৃত হবে না; বরং এটি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত হবে,' তিনি বলেন।
মন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল 'শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের বিক্ষোভের ভুল চরিত্রায়ন'কে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে জানায়, "ন্যূনতম মজুরির জন্য শ্রমিকদের অধিকারের বিক্ষোভকে আইনমন্ত্রীর 'গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য শ্রম অসন্তোষ' এবং 'নাশকতামূলক কাজ' বলে ভুল চরিত্রায়নকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রত্যাখ্যান করছে।"
এটি আরও বলে, 'শ্রমিকদের অধিকার মানবাধিকার! শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।
'অ্যামনেস্টি বাংলাদেশকে বর্তমান নিম্ন বেতন বজায় রাখার পরিবর্তে শ্রমিকদের উপযুক্ত কাজের সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানায়।'
এদিকে আইনমন্ত্রী তার বক্তৃতায় আরও উল্লেখ করেন, গত সপ্তাহে সরকার পোশাক শ্রমিকদের জন্য সংশোধিত মজুরি ঘোষণা করেছে, যা আগের মজুরির তুলনায় ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি।
আনিসুল হক এরপর বাংলাদেশের মতো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
'আমাদের মতো দেশগুলো চলমান রাজনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে উদ্ভূত নিষেধাজ্ঞা এবং পালটা নিষেধাজ্ঞা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটছে।
'জাতিসংঘের মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের সদস্য হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসব বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি ইউক্রেন ও গাজাসহ চলমান সব যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অবিরাম সোচ্চার থেকেছেন।'
তিনি বলেন, বাংলাদেশ 'গাজার ধ্বংসযজ্ঞ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন' এবং এটি ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে।
আইনমন্ত্রী কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন ব্যবস্থা যেমন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইউনিট গঠনের বিষয়েও কথা বলেন।
শ্রমিকেরা যাতে আইনি প্রতিকারে পেতে পারেন তার জন্য সরকার কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে — তাও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী।
মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের অসংখ্য অর্জন তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, 'আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে হিজড়া সম্প্রদায়ের লিঙ্গ পরিচয়কে স্বীকৃতি দিয়েছি এবং সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা বরাদ্দ করেছি। আমরা আমাদের আইন সংশোধন করেছি যাতে হিজড়া জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব লিঙ্গ পরিচয় দিয়ে একজন ভোটার এবং একজন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।'
সরকার জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রধান খাদ্য সামগ্রীতে ভর্তুকি প্রদান করি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে বা উচ্চ-ভর্তুকিতে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।'
আনিসুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশ তার শতভাগ জনসংখ্যাকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে, যা দেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় মাইলফলক।
'বাংলাদেশ সংবিধানে উল্লেখ করা বিনামূল্যে এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা অর্জনের জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বয়স্ক সাক্ষরতার হার বেড়ে ৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে। ঝরে পড়ার হারও কমেছে,' তিনি বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যদিও অগ্রগতি ছিল, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রায়শই নিজের কোনো দোষ ছাড়াই শাস্তি পেয়েছে।
'সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের কোনো দোষ ছাড়াই অনেক উপায়ে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশ অনেক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা এবং বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান।
'আমরা জলবায়ু অর্থায়ণ পাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি... আমরা সমস্ত আন্তর্জাতিক অভিতর্কে জলবায়ু ন্যায়বিচারের ধারণার পৃষ্ঠপোষকতাও করি।'
উপসংহারে আইনমন্ত্রী বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, বিভিন্ন লেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা যে প্রতিশ্রুতি নিয়েছি তা বাস্তবায়নের করার ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি... আমি স্বীকার করি যে, উন্নতির জন্য সর্বদা সুযোগ রয়েছে, বিশ্বের কোনো সমাজই নিখুঁত নয়।'