আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের আহবান ব্যবসায়ীদের
ক্রস বর্ডার ট্রেড নিয়ে ফেডারেশন অব চেম্বার এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) এক আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক তার অভিজ্ঞতা ভাগ করে জানিয়েছেন কিভাবে সিঙ্গাপুরের এক আমদানিকারক এ দেশ থেকে কৃষিপণ্য আমদানিতে নানা অব্যবস্থাপনায় নিরুৎসাহিত হয়ে ফিরে যান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, 'আমার কাছে সিঙ্গাপুরের এক বায়ার এসেছিলেন, যিনি বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং আমার সহযোগিতা চাইলেন। তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়ার পর তিনি শ্যামপুর প্যাকিং হাউজে গেলেন এবং সেখানকার কৃষিপণ্যের ক্লিনিং, প্যাকেজিং সহ বিভিন্ন বিষয় দেখে পুরোপুরি আশাহত হলেন।'
'এরপর তিনি গেলেন চট্টগ্রাম কাস্টমসে। সেখানে দেখলেন যে কন্টেইনারটা খালাসে ১২-২৪ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়, সেখানে সময় লাগছে ৪-৫ দিন। এই চিত্র দেখে আগ্রহ হারিয়ে তিনি সিঙ্গাপুর ফিরে গেলেন।'
রবিবার এফবিসিসিআই এবং ইউএসডিএ (ইউনাইটেড স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার) ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (বিটিএফ) প্রকল্প আয়োজিত 'ক্রস-বর্ডার ট্রেড: ইমপর্ট্যান্স অব রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইন সাপ্লাই চেইন অব অ্যাগ্রো প্রডাক্টস' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী এভাবে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়নের দাবি জানান।
কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন বিটিএফ'র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার এ এ এম আমিমুল এহসান খান। তার উপস্থাপনায় বলা হয়, "অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ৫টি কনসাইনমেন্টে শতভাগ, পরের ৫টিতে ২৫%, পরের ২০টিতে ৫% কনসাইনমেন্ট পরীক্ষা করা হয়। তবে কোন কনসাইনমেন্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারলে আবার শতভাগ কনসাইনমেন্ট পণ্য পরীক্ষা করে। ইউকে ফ্রুটস, ভেজিটেবলসের ৫%, ইইউ হাইলি রিফাইন্ড এনিমাল প্রডাক্টে ১%, পোল্ট্রি ও মিটের ১৫% কনসাইনমেন্ট পরীক্ষা করে থাকে।"
অথচ বাংলাদেশে আমদানি করে আনা প্রতিটি কনসাইনমেন্টের পণ্যই পরীক্ষা করা হয়। তাও আবার বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) আলাদা আলাদা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে থাকে। যেখানে সময় এবং খরচ দুটোই বাড়তি প্রয়োজন পড়ছে। এটা ক্রস-বর্ডার ট্রেডকে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্দরে উন্নত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি না থাকায় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবসায়ীকে একই পণ্য বারবার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এর ফলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তার ওপর পর্যন্ত। তাই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নয়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ খাদ্যসামগ্রী আমদানিকারক ও সরবরাহকারী সমিতির সভাপতি মোঃ বোরহান-ই-সুলতান বলেন, 'আমি যতবার যতগুলো কনসাইনমেন্ট আনছি, সবগুলোই পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিএসটিআই পরীক্ষা করছে, বিসিএসআইআর করছে, এটমিক এনার্জি করছে। অথচ আমি একটা ট্রাস্টেড সোর্স থেকে বছরের পর বছর বেবি ফুড আমদানি করছি। ল্যাবগুলোর ক্লিয়ারেন্স না পেলে কাস্টমস পণ্য ছাড়ছে না।"
"এতে কি হচ্ছে, আমাদের খরচ বাড়ছে, আমাদের বাড়তি সময় লাগছে। এর প্রভাবটা ভোক্তার উপরই পড়ছে। তাহলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের ডিপার্টমেন্টগুলোর হেলথ সার্টিফিকেট কেন নিয়ে আসছি? সেগুলোরও তো আলাদা খরচ রয়েছে। এই বিষয়গুলো সহজ করা দরকার। যেমনটা বিদেশিরা করছে।"
প্রাণ-আরএফএলের চেয়ারম্যান আহসান খান বলেন, "পৃথিবীর বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো আমাদের ফলো করা উচিত। তাহলে হয়তো পরিবর্তন আসবে।"
তিনি বলেন, "আমাদের ফুড সেফটি অথোরিটি রয়েছে, ভারতেরও আছে। সে দেশে এক্সপোর্ট (রপ্তানি) করতে হলে ভারতের ফুড সেফটি অথোরিটির সঙ্গে কোলাবোরেশন (সমন্বয়) বাড়াতে হবে। আর ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করা সহজ, ভালো মানের কারখানা করতে পারলেই এটা করা যায়।"
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন কিছু আমদানি করার চেয়ে আমেরিকায় রপ্তানি করা সহজ।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "বন্দর থেকে পণ্য খালাসের জটিলতা কমাতে রাজধানীর পূর্বাচলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে পণ্য টেস্টিং করে সরাসরি কার্গোতে পাঠানো হবে।"
ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও অর্থ অপচয়; দু'টিই কমে আসবে। খুব শীঘ্রই এর কাজ শুরু হবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "আন্তঃবাণিজ্য সহজ করতে সরকারের সাথে শীঘ্রই আলোচনা করবো আমরা। টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা যখন উন্নত দেশে উন্নীত হবো, টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা দরকার হবে আমাদের। আর এ জন্য নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"