দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়তে রেকর্ড ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রেকর্ড ৭৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ বেশি।
নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা প্রার্থীদের তালিকায় সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। তবে তারপরও প্রার্থীর সংখ্যা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে, ৩০০টি আসনে চূড়ান্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৯ জন। মোট মনোনয়ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৫টি।
এদিকে সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলিয়ে ৩০০টি আসনে মোট ২ হাজার ৭১৩টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে গতকাল (৩০ নভেম্বর)। এর মধ্যে ৩২টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৬ জন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৭৪৭ জন।
ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেছেন, শুক্রবার থেকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হবে এবং ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কোনো অসঙ্গতি বা অনিয়ম থাকলে প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে।
বিগত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ২০০১ সালে, এরপর ১৯৯১ সালে।
২০০১ সালে ৪৮৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং ১৯৯ক সালে ৪২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে ৪২,১০৩টি ভোটকেন্দ্রের অধীনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তা হলো: আওয়ামী লীগ ২৯৮টি (পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা দেয় দলটি), জাতীয় পার্টি ২৮৬টি (১৮টি আসনে দুইটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলটি), তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, জাসদ ৯১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, জাকের পার্টি ২১৮টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি, গণফ্রন্ট ২৫টি, গণফোরাম ৯টি ও জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ ১টি।
আরও রয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৩টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪৭টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ০৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি ৬টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১৪টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বিএমএল ৫টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ ৫৫টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৪৯টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭৪৭ জন।
রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের আপিল ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে এবং ১৮ ডিসেম্বর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণের তারিখের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে ৫ জানুয়ারি শেষ হবে।
দেশের ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি দল ইসিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তবে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।