চট্টগ্রামে এলাকায় এলাকায় আইসোলেশন সেন্টার, কমাচ্ছে সংক্রমণ ঝুঁকি
তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ফিরিয়ে দেওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় ৬২ বছর বয়সী জামাল উদ্দিনকে নেওয়া হয় হালিশহরের আইসোলেশন সেন্টারে। তখন রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ছিলো ৭২ শতাংশ, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রোগীকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। এরপর রোগীর শারীরিক অবস্থা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। রাত ৯টার দিকে রোগীর শরীরের অক্সিজেন মাত্রা ছিল ৯০ শতাংশ।
শুধু জামাল উদ্দিন নয়, চট্টগ্রামে করোনার চিকিৎসায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা আইসোলেশন সেন্টারগুলো অনেক রোগীর জীবন এভাবেই বাঁচিয়ে দিচ্ছে। করোনা সন্দেহে বেসরকারি হাসপাতালগুলো যখন রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে, তখন আইসোলেশন সেন্টারগুলো পাশে দাঁড়াচ্ছে, আগলে নিচ্ছে রোগীকে।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে চারটি আইসোলেশন সেন্টার চালু হয়েছে। এসব সেন্টারে চারশ'র বেশি শয্যা রয়েছে। এছাড়া পতেঙ্গার বিমানবন্দর এলাকায় ১০০ শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার প্রস্তুত হচ্ছে।
আইসোলেশন সেন্টারগুলো সংক্রমণ ঝুঁকি কমাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. শায়লা তাসনুভা বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই। উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে আইসোলেটেড করতে হবে।
আইসোলেশন ঠিকভাবে হলে সংক্রমণ ঝুঁকি কমে যায়। আইসোলেশনের অভাবে চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনেকগুলো আইসোলেশন সেন্টারটি ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে। যেগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে ভুমিকা রাখবে।
করোনার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে উঠেছে আগ্রাবাদে। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় ২৫০ বেডের আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইতোমধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আউটডোর ও ইনডোরে চিকিৎসা চলছে। প্রায় ১০০টি বোতলজাত অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে সেন্টারটিতে।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ কিছু তরুণ-যুবকের প্রচেষ্টায় মাত্র ১২ দিনে হালিশহর এলাকায় গড়ে উঠেছে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। ইতোমধ্যে সেন্টারটিতে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।
নুরুল আজিম রনি বলেন, ''চট্টগ্রামে সরকারি কোনো আইসোলেশন সেন্টার নেই। কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে শয্যাও খালি নেই। ফলে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। উপসর্গ নিয়ে অনেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আইসোলেশনের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাই আমরা আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে তুলেছি।''
চান্দগাঁও হামিদচর এলাকায় গড়ে উঠা মিনি আইসোলেশন সেন্টারটি নিয়ে চট্টগ্রামে সাড়া জাগিয়েছে। তরুণ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন একাই আইসোলেশন সেন্টারটি গড়েছেন। হামিদচর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শয্যার এই চিকিৎসাকেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস অক্সিমিটার, নেবুলাইজারের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন।
বন্দর এলাকায় গড়ে উঠা ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে ইতোমধ্যে সেবা শুরু হয়েছে। এলাকার কিছু চিকিৎসকের উদ্যোগ এবং বিত্তবানদের আর্থিক সহায়তা আইসোলেশন সেন্টারটি গড়ে উঠেছে। আইসোলেশনে সেন্টারটি উদ্যোক্তা ডা. হোসাইন আহমেদ বলেন, আমরা আউটডোরে সেবা শুরু করেছি। চলতি সপ্তাহে ইনডোরে রোগী ভর্তি শুরু হবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সংলগ্ন বাটারফ্লাই পার্কের বিকে কনভেনশনে ১০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দের অর্থায়নে সেন্টারটিতে পহেলা জুলাই থেকে চিকিৎসা শুরু হবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আইসোলেশন সেন্টারটির নিরাপত্তার দায়িত্বসহ যাবতীয় সহায়তা করছে।
বিদ্যানন্দের চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবক জামাল হোসেন বলেন, আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কাজ চলছে। চিকিৎসা সরঞ্জাম চলে এসেছে। এখন স্থাপন কাজ চলছে। পহেলা জুলাই থেকে চিকিৎসা শুরু হবে।
চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন শতাধিক। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের লাগাম টানতে আইসোলেশন সংক্রমণ সেন্টার জরুরি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা অনেক মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারছি না। বেসরকারিভাবে এসব আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠাতে চাপ অনেকটা কমেছে। সংক্রমণ ঠেকাতে আরও আইসোলেশন সেন্টার প্রয়োজন চট্টগ্রামে।