সরকারি হিসাবে চট্টগ্রামে মৃত্যু ১৩৬, করোনা ও উপসর্গে ৬২৭ জনের দাফন-সৎকার
চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলায় সরকারি হিসাবে ১৮ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ১৩৬ জন। কিন্তু দাফন-সৎকারে নিয়োজিত চট্টগ্রামের ৬টি প্রতিষ্ঠান করোনা ও উপসর্গে মারা যাওয়া ৬২৭ জনের দাফন-সৎকার সম্পন্ন করেছে।
চট্টগ্রামে ১৮ জুন পর্যন্ত করোনা রোগী বা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়াদের দাফন-সৎকারে নিয়োজিত আল মানাহিল ফাউন্ডেশন ২১০ জন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ১১০ জন, করোনা মৃতদেহ সৎকার সংঘ ২৩ জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫ জন, গাউছিয়া কমিটি ২০১ জন এবং শেষ বিদায়ের বন্ধু ১৮ জনের দাফন সম্পন্ন করেছে।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমরা করোনা মহামারি শুরুর পর মৃতদেহ দাফন সম্পন্ন শুরু করেছি। এই পর্যন্ত ২১০ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাদেক হোসাইন বলেন, গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রামে ২০১ জনের দাফন কাজ শেষ করেছে। দাফনকৃতের অধিকাংশই করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
চট্টগ্রামে শুধু শনাক্ত হওয়াদের মৃতের তালিকায় রাখা হচ্ছে। কারণ উপসর্গে মারা যাওয়াদের অধিকাংশ ব্যক্তি পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, উপসর্গ নিয়ে মৃতদের করোনা পরীক্ষা করলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব হতো। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেডিসিন বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, চট্টগ্রামে উপসর্গে মৃত অধিকাংশের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। তাই চট্টগ্রামে করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
মৃতদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও অনেকের হিসাব সরকারিভাবে রাখা হচ্ছে। শ্বাসকষ্টে ভুগে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম গত ৯ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে মারা যান। করোনার উপসর্গ থাকলেও তার নমুনা নেওয়া হয়নি। ফলে তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা সেটিও জানা যায়নি।
নজরুল ইসলামের স্বজন রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমার চাচার নমুনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা নমুনা সংগ্রহ করে না বলে জানিয়েছে। পরে পরীক্ষা ছাড়াই করোনা সাসপেক্টেড হিসেবে সরকারি নিয়মে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা না করায় চাচার করোনা ছিল কিনা আমরা জানতে পারিনি।
শুধু নজরুল ইসলাম নন, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উপসর্গে মারা যাওয়া অনেক মৃতের করোনা ছিলো কি-না জানা যাচ্ছে না। কারণ মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে না। ফলে আক্রান্ত ছিলেন কিনা সেটিও অজানা থেকে যাচ্ছে জানান স্বজনরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, উপসর্গে মৃতদের অধিকাংশের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া উপসর্গে মৃত অনেকের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে পারিবারিকভাবে। ফলে তাদের পরীক্ষা করা হয়নি।
মৃতদের নমুনা কেন পরীক্ষা হচ্ছে না জানতে চাইলে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে অনেকেই নমুনা দিতে আগ্রহ নয়, তাই নমুনা সংগ্রহ করা যায় না। তবে সরকারিভাবে সবার নমুনা পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
'সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে অনেক রোগী করোনার উপসর্গসহ নানা রোগে ভুগে মারা গেছেন। কিন্তু সব মৃতের তথ্য আমরা পাইনি। গোপনে অনেক পরিবার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির দাফন-সৎকার সম্পন্ন করেছে। তাই সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভবও হচ্ছে না। এজন্য মৃতের সংখ্যা নিয়ে একটি সংশয় রয়েছে, বিষয়টি আমরাও মানছি।' বলেন সিভিল সার্জন।
অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে ১০৫টি বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন সম্পন্ন করেছে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে অনেকের করোনার উপসর্গ ছিল বলে জানিয়েছেন আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সহকারী পরিচালক সেলিম নাছের।
তিনি বলেন, 'অধিকাংশ মরদেহ এসেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে। মৃতদের অনেকের করোনা উপসর্গ ছিল।'