ভাইবোনকে আমাজনে ১০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করিয়েছিলেন বেজোস, এখন বাজারমূল্য ১০০ কোটি ডলারের বেশি
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে একটি নতুন অনলাইন বইয়ের দোকানে কেউই হয়তো নিরাপত্তার কথা ভেবে বিনিয়োগ করত না। কিন্তু জেফ বেজোসের ভাই ও বোন মার্ক এবং ক্রিস্টিনা এরকম অনিশ্চিত বিনিয়োগ করেই কোটিপতি বনে গেছেন। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, তারা দুজনই ১০ হাজার ডলার দিয়ে আমাজন ডনকম ইনক.-এর ৩০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন। সেই বিনিয়োগ এতটাই লাভের মুখ দেখেছে যে দুই ভাইবোন এখন ১০০ কোটি ডলারের মালিক যা তাদের মোট লভ্যাংশের ১০,২৪৯,৯০০%।
লাক্সারি লঞ্চেজের একটি নিবন্ধে বলা হয় (যেটি ব্লুমবার্গের ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই-এর একটি রিপোর্ট থেকে করা), জেফ বেজোসের ভাই ও বোনের কেনা শেয়ারগুলোর মূল্য তখন ছিল ৬৪ কোটি ডলার যেটি আমাজনের তখনকার ৯১ ডলারের 'স্টক ক্লোজিং প্রাইস'-এর উপর ভিত্তি করে হয়েছিল। বর্তমানে আমাজনের 'স্টক ক্লোজিং প্রাইজ' ১৪৯ ডলার হয়ে যাওয়াতে তাদের অংশের বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০৪.৪ কোটি ডলার।
ই-কমার্সের গুরুত্ব আগেই বুঝতে পেরে উচ্চাভিলাষী বেজোস ১৯৯৪ সালের জুলাইয়ে আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন। তখন শুধু সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করত। এত বাধা থাকার পরেও বেজোস তার লক্ষ্যে অটল ছিলেন, কারণ তিনি ইন্টারনেটের বৃহত্তর সম্ভাবনা ঠিকমতো ধরতে পেরেছিলেন।
ব্যর্থতার ঝুঁকি প্রবল হলেও পরিবারসহ বিনিয়োগকারীদেরকে নিজের উদ্যোগের সম্ভাবনা সম্পর্কে বোঝানো বেজোসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। বেজোস তাঁর বাবা-মাকে তাদের বিনিয়োগ হারানোর ৭০ শতাংশ ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। "দ্য এভরিথিং স্টোর: জেফ বেজোস অ্যান্ড দ্য এজ অভ অ্যামাজন" বইয়ে বেজোস বলেছিলেন, "আমি চাই তোমরা জানো এইখানে কী কী ঝুঁকি আছে। কারণ এটা যদি কাজ না-ও করে, আমি থ্যাংকসগিভিংয়ের দিন বাড়ি ফিরতে চাই"।
১৯৯৪ সালে বেজোস ৬০টির মতো মিটিং করেছিলেন তার পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে, তাদেরকে দিয়ে তার অনলাইন বইয়ের দোকানে বিনিয়োগ করানোর জন্য। যে ৬০ জনের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৮ জন বিনিয়োগ করতে রাজি হননি। কয়েক বছর পর বেজোস বলেছিলেন, পরে ওই বিনিয়োগে রাজি না হওয়া অনেকে আফসোস করেছিলেন।
অনেক বাধাবিপত্তি পার করে আমাজন আজ সফল হয়েছে। ১৯৯৭ সালের ১৫ মে প্রতি শেয়ারে ১৮ ডলারের বিনিময়ে 'ডট-কম বাবল'-এর উত্তাল সময় পার করে প্রকাশ্যে আসে আমাজন। বেজোসের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি শুধু উন্নতিই করেনি, এটি খুচরা অনলাইন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে গিয়ে ১.৫ লাখ কোটি ডলারের বাজারমূল্য অর্জন করে এটি।
খুব একটা পরিচিত নাম না হলেও মার্ক এবং ক্রিস্টিনা বেজোস আমাজনের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। মার্ক বেজোস আমাজন থেকে সরে এসে বিজ্ঞাপন এবং জনহিতকর কাজে সফল ক্যারিয়ার গড়েছেন। ক্রিস্টিনা বেজোস পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি জনহিতকর কাজের মধ্য দিয়ে নিজের উপস্থিতি বজায় রেখেছেন।
বেজোস ভাইবোনদের আমাজনে বিনিয়োগের ঘটনা আর্থিক লাভের গল্পের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি নতুন ব্যবসার মাধ্যমেও কীভাবে সাফল্য অর্জন করা যায়, তার একটি বড় উদাহরণ। তাদের সাফল্য মনে করিয়ে দেয় যে নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এর ফলাফল হতে পারে অসাধারণ।