সাকিবদের বিদায় করে ফাইনালে তামিমের বরিশাল
শুরুর হতাশা কেটে যায় শামীম হোসেন পাটোয়ারীর খুনে ব্যাটিংয়ে। ১৫তম ওভারে উইকেটে গিয়ে তাণ্ডব চালান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি মেলে রংপুর রাইডার্সের। কিন্তু এই রান যথেষ্ট হলো না ফরচুন বরিশালের জন্য। সাকিব আল হাসান-তামিম ইকবালের লড়াই ছাপিয়ে ব্যাট হাতে কাণ্ডারী হলেন ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম, সঙ্গে আরও কিছু কার্যকরী ইনিংস। শুরুর চাপ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত সহজেই জয় তুলে নিল বরিশাল, তামিমের দলের মিলে গেল ফাইনালের টিকেট।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। বর্তমান মালিকানায় দ্বিতীয়বারের মতো বিপিএলের ফাইনালে উঠলো বরিশাল। ২০২২ বিপিএলে সাকিবের নেতৃত্বে ফাইনাল খেলে ফরচুন বরিশাল। সব মিলিয়ে বরিশাল নামের ফ্র্যাঞ্চাইজির এটা চতুর্থ ফাইনাল, ২০১২ সালে বরিশাল বার্নার্স ও ২০১৫ সালে ফাইনাল খেলে বরিশাল বুলস। তিন ফাইনালের দুটিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে হারে বরিশাল।
দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসা রংপুর ফ্লেঅফের দুই ম্যাচই হেরে বিদায় নিল। প্রথম কোয়ালিফায়ারে তাদের হারায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এলিমিনেটরে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারিয়ে ফাইনালের রেসে টিকে থাকে বরিশাল। আগামী ১ মার্চ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবেন তামিম-মুশফিকরা।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা রংপুর ব্যাটিং অর্ডার ওলট-পালট করে ফেলে। আগের ম্যাচে শামীমকে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামানো দলটি আজ রনি তালুকাদারের সঙ্গী হিসেবে পাঠায় শেখ মেহেদি হাসানকে। উপরে আনা হয় জিমি নিশামকেও। এই পরিবর্তনই যেন কাল হয় রংপুরের। ব্যাটিং ব্যর্থতায় সংগ্রহ বড় হয়নি রংপুরের। ৭ উইকেটে ১৪৯ রান করে তারা।
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, জেমস ফুলারদের দারুণ বোলিংয়ে দিক হারানো রংপুর প্রায় পুরো ইনিংসজুড়ে ধোঁকে। শেষ দিকে তাদের ইনিংসে প্রাণ ফেরান খুনে ব্যাটিংয়ে ২০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা শামীম। তার ব্যাটেই মূলত লড়াই করার পুঁজি মেলে রংপুরের। আবু হায়দার রনিকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ৭২ রানের জুটি গড়েন এবারের বিপিএলের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলা শামীম। জুটির ৭২ রানের মধ্যে ৫৮ রানই করেন তিনি।
শামীমের ঝড় তোলা ব্যাটিংয়ে শেষ চার ওভারে ৬০ রান পায় রংপুর। বরিশালের পেসার ওবেদ ম্যাকয়ের করা ইনিংসে ১৯তম ওভার থেকে ২৬ রান তোলেন শামীম, মারেন ৩টি ছক্কা ও ২টি চার। জবাবে সাবধানী শুরুর পরও তামিম-মিরাজরা টিকতে পারেননি। মুশফিক-সৌম্যের ব্যাটে ফেরে বরিশালের ইনিংসের চেহারা। এরপর কাইল মেয়ার্স ও ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন নায়ক মুশফিক, তখনও বাকি ছিল ৯ বল।
লক্ষ্য তাড়ায় বরিশালও ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনে। তামিমের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন মিরাজ। এ দুজন দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে দেন রংপুরের পেসার আবু হায়দার রনি। এখান থেকে মুশফিক ও সৌম্যর প্রতিরোধ, ৩৭ বলে গড়েন ৪৭ রানের জুটি। ১৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২২ রান করেন সৌম্য।
আজ ব্যাটিং অর্ডারে একটু নিচে নামা মেয়ার্স উইকেটে গিয়েই তাণ্ডব চালান। মুশফিকের সঙ্গে ২৭ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ার পথে ১৫ বলে একটি চার ও ৩টি চক্কায় ২৮ রান করেন ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার। জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন মুশফিক ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান মিলার। ম্যাচসেরা মুশফিক ৩৮ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৭ ও মিলার ১৮ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২২ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুরের রনি ২টি এবং ফজল হক ফারুকী ও মোহাম্মদ নবী একটি করে উইকেট নেন।
রংপুর দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায়। রান তুলতে সংগ্রাম করতে থাকা শেখ মেহেদিকে ফিরিয়ে দেন বরিশালের পেসার সাইফউদ্দিন। ৫ বলে ২ রান করে উইকেট পেছনে ক্যাচ দেন এই অলরাউন্ডার। এই ওভারেই রংপুরের বিপদ বাড়ান সাইফউদ্দিন। শেষ বলে তুলে নেন সাকিব আল হাসানের উইকেটও। দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া রংপুর রান তুলতে রীতিমতো হিমশিম খেতে থাকে।
দেখেশুনে খেলেও কাজ হয়নি, ৪.৪ ওভারে রনি তালুকদারকে সাজঘর দেখিয়ে দেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার কাইল মেয়ার্স। ১২ বলে ৮ রান করেন রনি। চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন চারে নামা জিমি নিশাম ও নিকোলাস পুরান। কিন্তু এই জুটিও পারেনি দলের দুঃসময়কে পেছনে ফেলতে। ২৬ বলে ৩০ রানের জুটি গড়ার পর ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন ১২ বলে মাত্র ৩ রান করা পুরান। ৯ ওভারে ৪ উইকেটে রংপুরের রান তখন ৪৮।
পরের বলে নিশামকে ফেরান ফুলার। ইংলিশ এই পেসারের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়া নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার ২২ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন। মোহাম্মদ নবী ১২ রান করে ফেরার পর সোহানের সঙ্গে যোগ শামীম। যদিও সোহান এরপর বেশি সময় টিকতে পারেননি রংপুর অধিনায়ক। ১৭ বলে একটি চারে ১৪ রান করে থামেন তিনি।
বাকিটা সময় চলে কেবলই শামীমের ব্যাটিং শো। সামনে-পেছনে, ডানে কিংবা বামে; তিনি যেখানে যে শট খেলেছেন, সেটাই ব্যাটে বলে হয়েছে। রংপুরের ইনিংসের চেহারা পাল্টে দেওয়া শামীম ২৪ বলে ৫টি করে চার ও ছক্কায় হার না মানা ৫৯ রানের দুর্বার ইনিংস খেলেন। আবু হায়দার ৯ বলে একটি ছক্কায় অপরাজিত ১২ রান করেন। বরিশালের ফুলার ৩টি ও সাইফউদ্দিন ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান কাইল মেয়ার্স ও মিরাজ।