‘ভালো থেকো, মা’: মৃত্যুর আগে মুঠোফোনে শান্ত
'আমার ছেলে কখনও ভিডিও কল দেয় না। কাল রাইতে মোবাইলে ভিডিও কল দিসে। আমাগো সবার খোঁজ খবর নিসে। আমি ওর কথা হুইন্না জিগাইলাম তর কী হইসে? আমারে কইলো কিছু হয় নাই। ফোন রাখার আগে কইলো তোমরা ভালো থাইকো মা। এর কিছুক্ষণ পর হুনলাম পোলার রেস্তোরাঁয় আগুন লাগছে।'
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবনের আগুনে নিহতদের একজন শান্ত হোসেনের মা এভাবেই আহাজারি আর আর্তনাদ করে ছেলের সঙ্গে শেষ কথোপকথন স্মরণ করেন।
প্রবাসে সুবিধা করতে না পেরে মাত্র ২৩ বছর বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবনের একটি রেস্তোরাঁয় চাকরি নিয়েছিলেন শান্ত। পরিবারের চিন্তা করে নিজের পড়াশোনা বিসর্জন দেওয়া এ যুবক শুক্রবার বাড়ি ফিরেছেন লাশ হয়ে। মায়ের আহাজারি আর প্রতিবেশী ও শান্তর সমবয়সীদের চোখেমুখে এখন শুধুই হাহাকার।
শান্তর ভাই প্রান্ত হোসেন বলেন, 'রাতে মোবাইলে দেখি ঢাকার বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় আগুন লেগেছে। আমি তখনই বুঝতে পারি এ ভবনে আমার ভাই চাকরি করে। আমি সাথে সাথে ভাইয়ারে ফোন দেই, কিন্তু মোবাইল বন্ধ পাই।
'আম্মুরে প্রথমে বলতে চাইনাই, কিন্তু পরে শুনি আম্মুকে নাকি [শান্ত] অনেক রাতেই ফোন দিয়ে সবার কথা জিজ্ঞাসা করছে। ভাইয়ার সাথে কাজ করে এমন আরেকজনের মাধ্যমে মধ্যরাতে খবর পাই ভাইয়ার লাশ হাসপাতালে আছে। আজকে সকালে লাশ বাসায় নিয়ে এসেছি।'
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন ভুইঁগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার প্রবাসী আমজাদ হোসেনের ছেলে শান্ত। বছরখানেক আগে বাবার সঙ্গেই সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন শান্ত।
নিহত শান্তের স্বজনেরা বলেন, 'শান্ত তার নামের মতোই ছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শান্ত সবার বড়। তার বাবা বিদেশে ব্যবসা করে সুবিধা করতে পারছিলেন না। সেজন্য পড়াশোনা বাদ দিয়ে শান্ত নিজেই বাবাকে সহায়তা করতে যান। সেখানে পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় দেশে ফিরে চাকরি নিয়েছিলেন রেস্তোরাঁয়।'
মৃত্যুর সংবাদে পরিবারকে শান্তনা দিতে উপস্থিত হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ মিয়া। তিনি বলেন, 'আমার এলাকার বাসিন্দা হিসেবে তাদের আগে থেকেই চিনতাম। ছেলেটার বাবা বিদেশে, আসতে পারছেন না। তাদের আর্থিক অবস্থাও তত ভালো নয়। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে তাদের যেন আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়।'