নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিবোর্ডের সাবেক ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সাবেক আট সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অসৎ উদ্দেশে বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি ক্রয়, ব্যবহার, জ্বালানি তেল ক্রয় ও পরবর্তীতে বিক্রির মাধ্যমে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৮ টাকা ক্ষতিসাধনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করেছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে— নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের তৎকালীন সদস্য বেনজীর আহমেদ, এম এ কাশেম, রেহানা রহমান, আজিম উদ্দিন আহমেদ, মো. শাহজাহান, ইয়াছমিন কামাল, ফওজিয়া নাজ ও তানভীর হারুন।
এছাড়া মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৯, ৪২০, ১০৯ ধারা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন–২০১০-এর ৪৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন–১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
নথি থেকে জানা গেছে, আসামিরা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক পরস্পর যোগসাজশে সাধারণ তহবিলের অর্থ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন—২০১০-এর ৪৪ (৭) ধারা লঙ্ঘন করে ৪৯ ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের অসৎ উদ্দেশে বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি ক্রয়, ব্যবহার ও পরবর্তীতে বিক্রির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৫ টাকা এবং জ্বালানি ও চালকের বেতন বাবদ ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৫০৩ টাকা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন করেছেন। সবমিলিয়ে ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৮ টাকা ক্ষতিসাধনপূর্বক আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা।
এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ওই আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৪৪(৭) ধারা লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় করার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ২০২২ সালের ১৭ মে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রয় করতে বাধ্য হয়।
গাড়িগুলো মোট ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৬২ হাজার ৭৪৫ টাকায় বিক্রি করলেও ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৫ টাকায় কম পাওয়া গেছে। যার ফলে ওই টাকা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২২ সালের ৫ মে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দেশের শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ও চার সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম. এ. কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এদিকে, ১৫ শতাংশ কর দিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর বেকায়দায় পড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কর না দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেইসঙ্গে, বকেয়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে বলে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এরপর রাজস্ব বোর্ড কর আদায়ে তোড়জোড় শুরু করে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো– নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।