এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে: বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ইতিমধ্যেই গত বছরের একই সময়কালের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি আর খারাপ হয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের—যা গত বছরের একই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর দ্বিগুণের বেশি। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের। এছাড়া এ বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও গত বছরের এ একই সময়কালের দ্বিগুণের বেশি।
দেশে ২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন।
তবে এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি গতবারের তুলনায় আরও খারাপ হতে পারে শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
মেডিক্যাল এন্টোমোলজিস্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞানের অধ্যাপক খবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বিশেষ করে এ বছর ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঢাকার চেয়ে বেশি খারাপ হবে, কারণ গত বছর সারা দেশে এডিস মশা ছড়িয়ে গেছে।'
তিনি বলেন, 'ঢাকায় ডেঙ্গু রোধে প্রিভেন্টিভ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ঢাকার বাইরে তো কিছুই করা হয় না।'
দেশে সাধারণত ডেঙ্গুর পিক মৌসুম জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। তবে গত বছর মৌসুমের আগে জুন মাস থেকেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। গত বছর ডেঙ্গু পিকে ছিল সেপ্টেম্বর মাসে। গত জুনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।
খবিরুল বাশার বলেন, 'এ বছরও সিজনের আগে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়বে বলে মনে হচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া উচিত। মশার ব্রিডিং সোর্সে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তবে ঢাকার বাইরে উপজেলা ও জেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যেন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা যায়, সে প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো দেরিতে চিকিৎসা শুরু করা।'
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৭৩৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এবিএম আবদুল্লাহ 'মাইল্ড কেসের' জন্য দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্যারাসিটামল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'ডেঙ্গু শনাক্ত হলে ভয় পাওয়া যাবে না। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে তীব্র পেটব্যথা, বমি, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং নাক, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।'
ঈদের পর এডিস মশা নিধনে বিশেষ কার্যক্রম
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ঈদের পর মশা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা জোরদার করার পরিকল্পনা করেছে। তাদের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে লার্ভিসাইড প্রয়োগ এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা।
তারা মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরাসরি ব্যাসিলাস থুরিংয়েনসিস ইসরাইলেন্সিস (বিটিআই) আমদানি করার পরিকল্পনা করেছিল।
ঢাকা দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. ফজলে শামসুল কবির টিবিএসকে বলেন, ঈদের পরই তাদের বিশেষ ডেঙ্গুপ্রতিরোধ কার্যক্রম শুরু হবে।
তিনি বলেন, 'আমরা ঈদের পরে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্পেশাল কার্যক্রম শুরু করব। তবে সারা বছরজুড়েই আমাদের মশা নিধনে কার্যক্রম চলে। এখন যে মশা দেখা যায়, তার অধিকাংশই কিউলেক্স।'
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু রোগীর যে তথ্য দেওয়া হয়, সেটা ভুল রিপোর্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে; সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোগী আসে। এসব রোগীকে ঢাকা দক্ষিণের রোগী হিসেবে দেখানো হয়, যা সম্পূর্ণ ভুল। ঢাকা দক্ষিণে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এখন শূন্যের কোঠায়।
ঢাকা উত্তরের ডেপুটি চিফ হেলথ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রুবায়েত ইসমাত অভিক বলেন, 'ঈদের পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব আমরা। এর বাইরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য থানা, আবাসন, প্রাথমিক-উচ্চ ও মহাবিদ্যালয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। ডেঙ্গু বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে এবার আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এবারে সরাসরি বিটিআই আমদানি করে এডিস মশা দমনে ড্রেন, খাল, জলাধারে প্রয়োগ করব। যেসব ওয়ার্ডে গত বছর বেশি রোগী পাওয়া গেছে, সেসব ওয়ার্ডে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হবে।'
এদিকে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'আমরা বছরের শুরু থেকেই দিনে লার্ভিসাইড এবং সন্ধ্যায় ফগিং করছি। তবে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে মশার আধার তৈরি হয়েছে।'
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ জনের একটি বিশেষজ্ঞ টিমও গঠন করেছে সিটি কর্পোরেশন।