হিটওয়েভে আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে যা করবেন
বর্তমানে হিটওয়েভে শিশুদের অবস্থা বেশি নাজুক। কাশি, জ্বর, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হিটওয়েভের এই সময়ে শিশুকে সুস্থ রাখতে কী করতে হবে, সেই বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলেছেন ডা. আবু সাঈদ শিমুল। তার পরামর্শ-
৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু ব্রেস্ট ফিডিং
৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। যারা শুধু বুকের দুধ খায়, সেসব শিশুর মায়েদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি পানি, রসালো ফল, স্যালাইন খেতে হবে। কমপক্ষে তিন লিটার পানি, স্যালাইন মায়েদের খেতে হবে। শিশুর জন্য মায়েরও যত্বের প্রয়োজন।
শিশুকে বয়স অনুযায়ী পানি পান করাতে হবে
দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুদের বয়স অনুযায়ী পানি পান করাতে হবে। বাচ্চার ওজন ১০ কেজি হলে এক লিটার, ২০ কেজি হলে দেড় লিটার পানি পান করাতে হবে। পাশাপাশি ফলও খাওয়ানো যেতে পারে। তরমুজ, আমের মৌসুমে আম ও ঘরে তৈরি শরবতও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে বাইরের কোনো জুস খাওয়া যাবে না।
ঘাম হলে সাথে সাথে মুছে দিতে হবে
শিশু ঘেমে গেলে সাথে সাথে মুছে দিতে হবে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেই শিশুকে বাইরে খেলতে দেওয়া যাবে না। শিশুকে রঙ্গিন কাপড় পরানো যাবে না। হালকা রঙের জামা বিশেষ করে সাদা হলে ভালো। শিশু যেন খুব বেশি ছোটাছুটি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে
দীর্ঘ সময় বাইরে থাকলে বা খেলাধুলা করলে শিশুরা অজ্ঞান হয়ে যায়, নিস্তেজ হয়ে পরে, মাথা ঘোড়ে, বমি বমি লাগে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে হিটস্ট্রোক। এমন হলে শিশুকে সাথে সাথে ছায়ায় নিয়ে পরনের কাপড় খুলে দিয়ে পানির ছিটা দিতে হবে। সাথে যদি ফ্যান থাকে, তাহলে ফ্যান ছাড়তে হবে। রাস্তায় এমন হলে হাতের কাছে যা পাওয়া যাবে, তাই দিয়েই বাতাস করতে হবে।
বরফ শীতল পানি পান করানো বা গোসলে ব্যবহার করা যাবে না
শিশুকে বরফ শীতল পানি পান করানো যাবে না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিতে হবে। ডাবের পানি দিতে হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
প্রতিদিন গোসল করাতে হবে
শিশুর জন্মের পর প্রথম দুই দিন গোসল করানো যাবে না। আর প্রিম্যাচিউর শিশু চিকিৎসকের পরামর্শে গোসল করাতে হবে। এছাড়া সব শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।
পাউডার ব্যবহার করা যাবে না
শিশুদের শরীরে পাউডার দেওয়া যাবে না। এতে লোমকুপ বন্ধ হয়ে চুলকানি হতে পারে। তেল একেবারেই দেওয়া যাবে না।
ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাবে
৬ মাসের বাচ্চাকেও স্যালাইন খাওয়ানো যাবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত ১০-২০ চামুচ ও দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা ২০-৪০ চামুচ স্যালাইন খেতে পারবে। আর ৫ বছরের বেশি বয়সীরা যতটুকু পারে ততটুকুই খাবে।
জ্বর-কাশিতে গোসল করা জরুরি
এখন ঘরে ঘরে জ্বর, কাশির রোগী। কিন্তু ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে শিশুদের গোসল করাতে চায় না অনেকে। জ্বর, কাশিতে গোসল করাতে হবে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি। শিশুকে টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে।
বাইরে গেলে ছাতা, পানি, টাওয়েল ও স্যালাইন সাথে রাখতে হবে
বাইরে বের হলে অভিভাবকদের শিশুর জন্য পানি, ছাতা, ছোট টাওয়াল ও স্যালাইন সাথে রাখতে হবে। বাইরে টাওয়ালে পানি ঢেলে শিশুর গা মুছে দিতে হবে, স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
ডা. আবু সাঈদ শিমুল: সিনিয়র কনসালটেন্ট, শিশু রোগ বিভাগ, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল