শিগগিরই চট্টগ্রামের রাস্তায় নামছে ২০টি এসি বাস
কাপ্তাই সড়ক মোড় থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য চট্টগ্রামের ১৪ নং রুটে শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে ২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, আসন্ন জুনের মধ্যে বাণিজ্যিক পরিষেবা চালু করতে ইতোমধ্যেই ১০টি বাস প্রস্তুত রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়সহ বাসের ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হবে।
'চট্টলা চাকা'- এর ব্যানারে ৩৮ আসন বিশিষ্ট এই এসি বাসগুলো পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় পরিবহন সংস্থা শান্তি পরিবহন লিমিটেড।
বিআরটিএর এই কর্মকর্তা জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি বৈঠকের পর 'চট্টলা চাকা' বাস সার্ভিসের অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, "আমরা সব সময় গণপরিবহন মালিকদেরকে যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের জন্য কাউন্টার-ভিত্তিক বাস পরিষেবা চালু করতে উৎসাহিত করি।"
বাসগুলোর চেসিস ভারতীয় কোম্পানি টাটা মোটরসের হলেও বডিগুলো দেশেই তৈরি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন টিটো বলেন, ঢাকার আদলে বন্দরনগরীতে এই সেবা চালু হতে যাচ্ছে।
"এ উদ্যোগের শতভাগ সুবিধা পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে যাত্রীরা তুলনামূলকভাবে ভালো সেবা পাবেন," যোগ করেন তিনি।
কাউন্টার-ভিত্তিক বাস সার্ভিস সড়কে লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যা কমিয়ে আনবে উল্লেখ করে উপ-কমিশনার বলেন, "কোম্পানি-ভিত্তিক কাউন্টার সার্ভিস চালু হলে, বাস পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসন করা সহজ হবে। তবে এই পরিষেবার শর্তগুলো ঠকঠাকভাবে অনুসরণ করতে হবে।"
এসি বাস সার্ভিস চালুকে স্বাগত জানিয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এসএম নাজির হোসেন বলেন, "নতুন এসি বাস সার্ভিস যাত্রীদের গণপরিবহনে চলাচল করতে উৎসাহিত করার পাশপাশি সড়কে যানজট কমাতেও সাহায্য করবে।"
তবে তিনি এই পরিষেবা থেকে বাণিজ্যিক সুবিধা পেতে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে, মালিকদেরকে নতুন ও আরামদায়ক বাস দিয়ে আরও কাউন্টার-ভিত্তিক পরিবহন সেবা চালু করতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
শান্তি এক্সপ্রেস (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের প্রাথমিকভাবে ২০টি এসি বাস চালু করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমাদের ১০টি বাস শীঘ্রই শহরের রাস্তায় নামবে।"
তিনি বলেন, "যেহেতু এটি এসি বাস পরিষেবা, তাই শুরুতে আমাদের কাউন্টারের সংখ্যা কম থাকবে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী কাউন্টারগুলো হলুদ ও লাল ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে।"
ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "সব শ্রেণির আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে আমরা সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শীঘ্রই ভাড়ার চার্ট অনুমোদনের জন্য বিআরটিএ-তে পাঠানো হবে। রাজধানীতে চলাচলকারী নন-এসি বাস ও অন্যান্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এটি ঠিক করা হবে।"
তিনি আরও বলেন, বাসে আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী ওঠানো হবে না।
মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এই রুটে বর্তমানে মোট ৩০০টি বাস চলছে— যারমধ্যে ২৫০টি নন-কাউন্টার ভিত্তিক ও ৫০টি কাউন্টার-ভিত্তিক পরিষেবা দিচ্ছে। আর এই বাসগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ যাত্রী যাতায়াত করছেন।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, নগরীতে বাসের জন্য ১৭টি, হিউম্যান হলারের জন্য ১৮টি এবং অটো-টেম্পোর জন্য ২০টি রুট রয়েছে। এরমধ্যে বাসের জন্য নির্ধারিত রুটগুলো দিয়ে দৈনিক ১,২০০ এরও বেশি বাস চলাচল করে। এছাড়া, অন্যান্য নির্ধারিত রুটগুলো দিয়ে ২,০০০ এরও বেশি হিউম্যান হলার এবং অটো-টেম্পো চলে বন্দর শহরের রাস্তায়।
তবে চট্টগ্রামে ঠিক কত সংখ্যক যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করেন, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
এর আগে, ২০১৬ সালে প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস (প্রা.) লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি রুটটিতে ৬টি পরিবহন নিয়ে এসি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
পরবর্তীতে ২০২২ সালে, চট্টলা সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি সংস্থা শহরে ১৫০টি ট্যাক্সি ক্যাব চালু করার উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্যোগও আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হুসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন এবং সিএমপি থেকে অনুমতি নিয়েছি। কিন্তু বিআরটিএ ট্যাক্সি ক্যাব পরিচালনার নিয়মের অজুহাত দেখিয়ে গত বছর থেকে আমাদের রুট পারমিট দেওয়ার অপেক্ষায় বসিয়ে রেখেছে।"