নিউরালিংকের চিপ নেওয়া প্রথম রোগী ভয় পেয়েছিলেন, তার চিপটি খুলে ফেলতে হতে পারে
এক দুর্ঘটনায় হাত-পা চারটিই অচল হয়ে পড়ে ৩০ বছর বয়সি নোলান আরবা'র। তারপর প্রথম মানুষ হিসেবে ইলন মাস্কের নিউরালিংক কোম্পানির ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট চিপ 'দ্য লিংক' নিজের মস্তিষ্কে স্থাপন করিয়েছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এ চিপ প্রযুক্তি তার জীবন অনেক বদলে দিয়েছে।
এক হ্রদে লাফ দিতে গিয়ে মেরুরজ্জু ক্ষতিগ্রস্ত হয় নোলানের। এতে কাঁধ থেকে শরীরের নিচের অংশ অচল হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনার আট বছর পর এ বছরের জানুয়ারিতে নিউরালিংকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রথম মানুষ হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
'গুড মর্নিং আমেরিকা' টিভি শো-এর উইল রিভের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নোলান বলেন, এ চিপের কল্যাণে এখন কেবল নিজের চিন্তা ব্যবহার করে তিনি একটি কম্পিউটার প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কয়েনের আকারের এ চিপটি নোলানের মাথার খুলির নিচে স্থাপন করা হয়েছে। এটিতে ৬৪টি ক্ষুদ্র তার রয়েছে যেগুলোতে এক হাজারের বেশি ইলেকট্রোড সংযুক্ত। এসব ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের নিউরনের কার্যক্রম পাঠ করতে এবং কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে পারে বলে জানিয়েছে নিউরালিংক।
'আর দশজনের মতো আমিও এখন কম্পিউটার চালাতে পারি, যেটা আগে পারতাম না,' বলেন নোলান।
তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপের জন্য রাজি হওয়ার বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন নন, কারণ বৈজ্ঞানিক এ গবেষণার পুরোভাগে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তার মতো প্যারালাইসিসে ভোগা মানুষদের জীবনকে উন্নত করার পথ সহজ করতে তিনি সাহায্য করছেন।
'আমি জানতাম, আমি এতে রাজি হলে পরবর্তীকালে অনেকেই এ প্রযুক্তিতে ভরসা পাবেন,' বলেন তিনি।
চিপ স্থাপনের পর এখন পর্যন্ত দারুণ সাফল্যের পরও এমন কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছিল যেগুলোর কারণে নিউরালিংক এক পর্যায়ে নোলানের মাথা থেকে চিপটি খুলে ফেলারও চিন্তা করেছিল।
নোলান জানান, এক সময় তার চিপের কিছু তার মস্তিষ্ক থেকে আলগা হয়ে গিয়েছিল। তারপর ডিভাইসটির সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে নিউরালিংকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডিজে সিও জানান, চিপটিতে প্রযুক্তিগত কিছু পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন তারা। ফলে নোলানের মস্তিষ্কের সঙ্গে এটির সংযোগ আবার শক্তিশালী হয়।
এ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নোলানের ধারণা, কোনো একদিন হয়তো মানুষকে আর প্যারালাইসিসে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়তে হবে না। 'আমার মনে হয় না মানুষ যতটা দূরে ভাবছে, এ ব্যাপারটা আদতে তত দূরে,' বলেন তিনি।
তিনি বিশ্বাস করেন, ভবিষ্যতে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিরাও আবার হাঁটাচলার সক্ষমতা ফিরে পাবেন।
২০১৬ সালে বিলিয়নিয়ার ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক এবং একদল বিজ্ঞানী ও গবেষক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠা করেন।