ম্যাজিক রিয়েলিজমের মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বিদায় নিলেন
চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়েস হয়েছিল ৮২ বছর। করোনা সংক্রমণের কারণে দিন কয়েক আগে তাকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা তাঁর মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেন।
কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩৮ সালে সিলেটে। মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নানা ধরনের কাজ করেছেন। পড়েছেন তুলনামূলক সাহিত্য, ভারতীয় নন্দনতত্ত্ব, ললিতকলার ইতিহাস। তার প্রথম অধ্যাপনার শুরু মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে যোগ দেন।
মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যে অবদান বহুমাত্রিক: তিনি দুই বাংলার পাঠককে লাতিন আমেরিকার সেরা সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ম্যাজিক রিয়েলিজিমের সঙ্গেও পরিচয় তার হাত ধরেই। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন ১৯৮২ সালে। তার অনেক আগেই, ১৯৭০ সালেই তাঁর লেখা অনুবাদের কাজে হাত দিয়েছিলেন মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুবাদ করেন 'কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না', 'সরলা এরেন্দিরা'। এমনকি মার্কেসের বিখ্যাত নোবেল ভাষণটিও অনুবাদ করেছেন তিনি।
আরেক লাতিন আমেরিকার দিকপাল লেখক কার্লোস ফুয়েন্তেসকেও বাঙালি প্রথম পড়েছে তারই অনুবাদে।
মানবেন্দ্র নিজে অনুবাদ শব্দটি পছন্দ করতেন না।এক সাক্ষাৎকারে মজার ছলে বলেছিলেন, 'আমি বলি, অনুবাদ মানে হল অনু পরিমাণ বাদ। সে কারণেই এই তর্জমা শব্দটার কথা বলা। অর্থাৎ, জমা পড়ে যেটা। সেটা ইয়ার্কি করেই বলি!'
শিশুসাহিত্যে তার বিশেষ অবদানের জন্য মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় খগেন্দ্রনাথ মিত্র স্মৃতিপুরস্কার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার পেযেছেন, আর অনুবাদে তার কৃতিত্বের জন্য ভারতীয় সাহিত্য একাদেমি তাঁকে অনুবাদ পুরস্কারে ভূষিত করেছিল।