ইউক্রেনে সহায়তার লাগাম টানব, ফুটবলার এমবাপ্পে ফরাসিদের প্রতিনিধিত্ব করেন না: মেরিন লা পেন
রাশিয়ার কাছে ভূমি হারাচ্ছে ইউক্রেন, এর মধ্যেই অন্যতম শক্তিশালী মিত্র দেশ থেকে পেল দুঃসংবাদ। ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) নেতা মেরিন লা পেন ঘোষণা দিয়েছেন, তারা ক্ষমতায় এলে কিয়েভে সহায়তা প্রদানে লাগাম টানবেন।
রোববার (৭ জুলাই) ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে আজ। প্রথম দফার ভোটে জিতেছে আরএন; দ্বিতীয় দফাতেও জয়ের আশা করছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে কট্টর ডানপন্থিদের নেতা লা পেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ফ্রান্সের সরবরাহ করা দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে কিয়েভ যেন রাশিয়ার আক্রমণ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট মাখোঁর ইউক্রেনে ফরাসি সেনা পাঠানোর পরিকল্পনাও বাতিল আটকে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মেরিন লা পেন সিএনএনকে বলেন, 'ইমানুয়েল মাখোঁ যদি ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে চান এবং প্রধানমন্ত্রী তার বিরোধিতা করেন, তাহলে ইউক্রেনে কোনো সেনা যাবে না। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কথাই চূড়ান্ত।'
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও আরএনই সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বলে বিভিন্ন জরিপে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আর মাখোঁ সম্ভবত লা পেনের শিষ্য ও দলের নেতা জর্ডান বারদেল্লোকে প্রধানমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেবেন। তবে বারদেল্লো এর আগে বলেছেন, আরএন বড় ব্যবধানে জিতলেই কেবল প্রধানমন্ত্রীর পদ নেবেন তিনি।
আরএনের দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার নীতি নিয়ে মাখোঁর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধতে পারে।
লা পেন বলেছেন, ইউক্রেনে ফরাসি সেনা পাঠানো ঠেকানোর পাশাপাশি কিয়েভকে ফ্রান্সের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় আক্রমণ করার অনুমতিও বাতিল করবেন তাড়া।
অতীতে রাশিয়াকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন 'পুতিনভক্ত' লা পেন। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রশংসা করেছেন। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলে নেওয়ার পর পুতিনের সমালোচনা করতে রাজি হননি। এমনকি লা পেন একটি রুশ ব্যাংক থেকে ঋণও নিয়েছেন।
লা পেন প্রকাশ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বলেছেন।
এমবাপ্পের সমালোচনায় লা পেন
ফরাসি ফুটবল তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পের সমালোচনায়ও মুখর হয়েছেন মেরিন লা পেন। গত সপ্তাহে কট্টর ডানপন্থিদের ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে একদল তারকার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মুখ খোলেন এমবাপ্পেও। তার প্রতিক্রিয়াতেই বর্তমান ফ্রান্স ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকাকে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করলেন লা পেন।
প্রথম দফার ভোটে আরএন ভালো ফল করার পর বৃহস্পতিবার এমবাপ্পে বলেছিলেন, 'জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই মানুষগুলোর হাতে আমাদের দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। …আমরা বোধহয় ফলাফল দেখেছি, এটা বিপর্যয়কর।'
আলজেরিয়া ও ক্যামেরুন বংশোদ্ভূত এমবাপ্পে মাসের শুরুর দিকে বলেছিলেন, যারা তাড়া 'মূল্যবোধের' প্রতিনিধিত্ব করে না, তাদেরকে 'দেশের প্রতিনিধিত্ব' করতে দিতে চান না তিনি।
লা পেন এমবাপ্পের এ মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে উল্টো এমবাপ্পেই সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি নন বলে মন্তব্য করেছেন।
আরএন নেতা বলেন, 'কীভাবে ভোট দিতে হবে, তা নিয়ে লেকচার আর উপদেশ শুনতে শুনতে ক্লান্ত ফ্রান্সের মানুষ।'
তিনি বলেন, 'এমবাপ্পে ফ্রান্সের অভিবাসীদের প্রতিনিধি না। কারণ ন্যূনতম মজুরিতে বেঁচে থাকেন, বাড়ি কিনতে পারেন না, [ঠান্ডায়] ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন না—এমন অভিবাসীর সংখ্যাই মি. এমবাপ্পের চেয়ে অনেক বেশি।'