সহকর্মীকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে ভারতীয় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, হাসপাতালগুলোতে ধাক্কা
ভারতের কলকাতায় একজন ডাক্তারকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে চিকিৎসা পেশাজীবীরা ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে দেশটিজুড়ে হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে শনিবার জরুরি অবস্থা ছাড়া রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
১০ লাখেরও বেশি চিকিৎসকের এ কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির চিকিৎসা পরিষেবা থমকে গেছে। হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, মেডিকেল কলেজের ফ্যাকাল্টি কর্মীদের জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার শনিবার (১৭ আগস্ট) জারি করা এক বিবৃতিতে জনস্বার্থে চিকিৎসকদের দায়িত্বে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
৩১ বছর বয়সি একজন শিক্ষানবিশ ডাক্তার গত সপ্তাহে কলকাতায় তার কর্মস্থল আরজি কর মেডিকেল কলেজের ভেতরে ধর্ষণ ও খুনের শিকার হন। এরপর ভারতজুড়ে চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ শুরু করেন।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর একটি বিবৃতি অনুসারে, শনিবার সকাল ৬টায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়।
'জুনিয়র ডাক্তাররা সবাই কর্মবিরতিতে আছেন। অর্থাৎ মোটামুটি ৯০ শতাংশ ডাক্তার স্ট্রাইক করছেন,' রয়টার্সকে বলেন দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার আইএমএ'র প্রতিনিধি সঞ্জীব সিং যাদব।
এএনআই নিউজ এজেন্সি অনুসারে, আরজি কর মেডিকেল কলেজের বাইরে শনিবার পুলিশের ভারী উপস্থিতি দেখা যায়। তবে হাসপাতাল চত্বর জনশূন্য ছিল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যজুড়ে চলা বিক্ষোভকে সমর্থন করে তদন্ত দ্রুত করার এবং দোষীদের যথাসম্ভব কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার কলকাতায় প্রচুরসংখ্যক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ছিল।
শহরের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সন্দীপ সাহা রয়টার্সকে বলেন, তিনি জরুরি অবস্থা ছাড়া রোগী দেখবেন না।
উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ, গুজরাটের আহমেদাবাদ, আসামের গুয়াহাটি, তামিলনাড়ুর চেন্নাই এবং অন্যান্য শহরগুলোর হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছে। এর ফলে এটি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধের বৃহত্তম ঘটনা।
ফলে হাসপাতালে রোগীদের ভিড় তৈরি হয় শনিবার সকাল থেকেই। অনেকেই জানতেন না চিকিৎসকেরা আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে কর্মবিরতিতে গেছেন।
'আমি এখানে [হাসপাতালে] আসার জন্য ৫০০ টাকা খরচ করেছি পথভাড়া,' স্থানীয় টেলিভিশনকে বলেন ওড়িশার কটক শহরের এসসিবি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একজন রোগী।
'আমরা স্ট্রাইকের কথা জানতাম না। এখন কী করব? বাড়ি ফিরতে হবে,' বলেন তিনি।
এসসিবি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রঘুনাথ সাহু রয়টার্সকে বলেন, রোগীদের দেখার জন্য ডাক্তাররা যে কোটা ঠিক করেছিলেন, সেটা দুপুরের আগেই শেষ হয়ে গেছে।
'আমার অসুস্থ দাদীকে নিয়ে এসেছি। তারা আজ তাকে দেখেননি। আরেকদিন অপেক্ষা করতে হবে,' লাইন থেকে সরতে সরতে বললেন এ সেবাপ্রত্যাশী।
ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) তদন্তের অংশ হিসেবে আরজি কর মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তলব করেছে বলে কলকাতার একটি পুলিশসূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার হাসপাতালের অধ্যক্ষকেও জেরা করেছে ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধের তদন্তকারী সংস্থাটি।