সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ
দেশের সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কবে নাগাদ, কি পদ্ধতিতে এ সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে সে বিষয়ে শিগগিরই আদেশ জারি করা হবে।
গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'সরকারের উপদেষ্টারা শিগগিরই তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করবেন। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী সরকারের কাছে দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হবে।'
সরকারি কর্মচারী আইন (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুসারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল ও প্রকাশ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু নিয়মটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয় না। এজন্য হাইকোর্ট এই বিধিমালা বাস্তবায়নের নির্দেশনাও দিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে বিশেষ অগ্রগতি হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সরকারি চাকরীজীবীর অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রকাশিত হয়। এরপর সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা বাস্তবায়নের জোরালো দাবি ওঠে। এরপর গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত সচিব সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়।
সেসময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, '১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা দ্রুত যুগোপযোগী করে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। একইসঙ্গে ২০১২ সালের শুদ্ধাচার কৌশলও সংশোধন করা হচ্ছে।'
যদিও সরকারি চাকরিজীবীদের এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, আয়কর রিটার্ন দাখিলের মাধ্যমে প্রত্যেক কর্মকর্তাই তার সম্পদ বিবরণী সরকারের কাছে প্রতিবছর উপস্থাপন করছে। সরকারি কর্মচারী আইন (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি ১২ ও ১৩ অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের স্থাবর সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি ও সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এমনকি জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটসহ যে কোনো সম্পদ কিনতে বা বিক্রি করতেও সরকারের অনুমতি নিতে হয় তাদের। সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে টাকার উৎস সম্পর্কেও জানাতে হয়। আবার সম্পদ বিক্রি করা হলে দাম জানাতে হয়। কারণ, কমবেশি দামে সম্পদ বেচাকেনা হলো কি না, তা যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, একশ্রেণির সরকারি কর্মচারী তাদের আয়কর রিটার্ন বা এনবিআরে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে প্রকৃত সম্পদ দেখান না; বেনামে সম্পদ লুকিয়ে রাখেন।
প্রতিটি আয়কর রিটার্ন ফরমের সঙ্গে আইটি ১০বি নামে একটি আলাদা ফরম থাকে। ওই ফরমেই সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হয়। সম্পদ বিবরণী জমার তিনটি শর্ত আছে। সে অনুযায়ী সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা পার হলে, গাড়ির মালিক হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি-বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট থাকলে সম্পদ বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক।