বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশে মানুষের ভিড় আমাদের এখানকার বিয়েবাড়ির চেয়েও কম
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল বাংলাদেশ। এত মানুষের ভিড়ভাট্টায় চলাফেরার ঝক্কিও কম না। বাসে, ট্রেনে ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি তো আছেই – আবার ছুটির দিনগুলোয় দেশের পর্যটন স্থানগুলোতেও থাকে মানুষের ঢল। এ আমাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার অংশ। তাই সামর্থ্য যাদের আছে– দেশের এমন অনেকেই সুযোগ পেলে বেড়াতে পছন্দ করেন কম জনবহুল আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশে।
কাজের সূত্রে ইতালিতে থাকেন অনেক বাংলাদেশি। পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক নিদর্শনে ভরপুর ইতালির অলিগলি। ইতালি্র জনসংখ্যা একেবারে কম না, তবে সেখানে গেলে এক সুযোগে দুটি দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও হতে পারে অনায়সেই। আসলে দেশটির রাজধানী রোমের ভেতরেই আছে স্বাধীন আরেক দেশ – ভ্যাটিকান সিটি। বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশের তকমাও এর।
মাত্র দশমিক ৪৪ বর্গকিলোমিটারের ভ্যাটিকান একটি স্বাধীন রাষ্ট্রও বটে। তবে আয়তন আর জনসংখ্যাও তার আকারের মতোই ছোট। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভ্যিউ অনুযায়ী, ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা প্রায় ৪৯৭ জন।
এখন একবার ভাবুন, আমাদের দেশে গড়পড়তা বিয়ের অনুষ্ঠানেই এত মানুষ হয়– যার কাছে নিতান্তই হার মানে ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা। আর জাকজমক, আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের আয়োজনগুলোর তো কথাই নেই, যেখানে অতিথির সংখ্যা হাজার ছাড়ায় প্রায়শই।
তবে জনসংখ্যা বা আয়তনে যত সামান্যই হোক– ক্যাথলিক খৃষ্টানদের কাছে ভ্যাটিকানের তাৎপর্য অপরিসীম। কেননা এটি রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রশাসনিক কেন্দ্র।
এমন ক্ষুদ্র জনসংখ্যার অন্যান্য দেশের মধ্যে নাম করা যায় – মোনাকো, সান মারিনো, টুভালু, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি দেশের। এসব দেশের বেশিরভাগই আবার অনাবিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। ফলে পর্যটকরাও পান অনন্য অভিজ্ঞতা।
মোনাকোর জনসংখ্যা মাত্র ৩৮ হাজার ৬৩১ জন, বাংলাদেশের যেকোনো জেলা শহরের চেয়েও যা অনেক কম।
আবার ফ্রেঞ্চ রিভেয়েরা নামে খ্যাত ফ্রান্সের দক্ষিণপূর্বের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের মাত্র ১ দশমিক ৯৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে মোনাকোর অবস্থান। তবে এটি একটি স্বাধীন দেশ, যা গ্রান্ড প্রিক্স মোটর রেস, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ভূমধ্যসাগরের মনোরোম প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ আরো অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত।
পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় আরেকটি দেশ টুভালু দ্বীপমালা। দ্বীপদেশটির জনসংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৬৪৬ জন, যেখানে গিয়ে আপনি পাবেন নাগরিক জীবনের ভিড়ভাট্টা থেকে মুক্তি। শুধু অপার প্রকৃতি আর সাগর, প্রবাল প্রাচীরের দৃশ্য উপভোগ – অবশ্য যদি গাটের পয়সা থাকে তবেই।
অবশ্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সাগরের পানির স্তরও উঁচু হচ্ছে দিনকে দিন। এতে অনিশ্চিত দেশটির টিকে থাকা। জলবায়ু প্রভাবের পরিবর্তনে এরমধ্যেই জোয়ারে প্লাবিত হওয়াসহ বৈরী আবহাওয়ারও কবলে পড়ছে ছোট্ট এই দেশ। ভবিষ্যতে হয়তো সাগর গর্ভেই তলিয়ে যাবে পৃথিবীর মোহনীয় এক ভূখণ্ড।