ঈদের মাসেও কমেছে মূল্যস্ফীতি: আগস্টে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ৫.৪৯ শতাংশ
আগস্টে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট (আগের বছরের একই সময়ের তুলনায়) হিসেবে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে বলে দাবি করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যfন ব্যুরো (বিবিএস)। যা জুলাই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
একই সময়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৫.৪২ শতাংশ থেকে কমে ৫.২৭ শতাংশে ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৫.৯৪ শতাংশ থেকে কমে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫.২৭ শতাংশে।
খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে দামও বেড়ে যায় ঈদ কেন্দ্র করে। ঈদ উদযাপনের খরচ জোগাতে আগস্ট মাসের প্রথম ৯ দিনে ৭১৬ মিলিন ডলার মূল্যমানের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাড়তি ভোগ আর অতিরিক্ত মূল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি না বেড়ে উল্টো কমতে থাকার কারণের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, কোরবানির ঈদে পোশাক কম কিনে লোকজন গরু-ছাগল বেশি কিনে থাকেন। মূল্যসূচকে মাংসের ভর অনেক কম। অন্যদিকে মসলাপাতি বা অন্যান্য খাবারের ওয়েটও ভোক্তা সূচকে তুলনামূলক কম। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. তওফিকুল ইসলাম খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভর মওসুমে চালের দাম সামান্য কমে যাওয়ার প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়তে পারে। তবে ঈদ কেন্দ্র করে পণ্যের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি না কমে উল্টো বেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তিনি আরও বলেন, আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করে তৈরি মূল্যস্ফীতির হিসাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবের বিষয়গুলো থাকার কথা ছিল। তাছাড়া এ সময় বাড়িভাড়া, পরিবহন ভাড়া ও চিকিৎসাব্যয়ও বেড়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঠিক চিত্র পেতে হলে মূল্যস্ফীতি হিসাব করার পদ্ধতি শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভাশেষে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তিনি বলেন, বৃষ্টি-বাদল ও বন্যার প্রভাব কমে আসায় বাজার স্বাভাবিক হয়েছে। কোরবানির ঈদের পর চাহিদা কমার পাশাপাশি দাম কমে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি সে হারে বাড়েনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আগস্টের মাঝামাঝি সময় ঈদ উদযাপিত হয়েছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমনটা জানানো হলে বিবিএস মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, মাসের ১৩ তারিখ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত সময়ে বাজার মনিটরিং করে পণ্যের দাম সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। আগেই ঈদ উদযাপিত হওয়ায় এর প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে পড়েনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমেছে ব্যাপক হারে। গত মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। জুলাই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪২ ভাগ। আর গত বছরের আগস্টে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মাসিক ও বার্ষিক হিসাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আগস্টে কমেছে।
খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য পণ্যে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কিছূটা কমেছে বলে প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে। এতে বলা হয়েছে, আগস্টে খাদ্য ছাড়া অন্যান্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের মাসে এর হার ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে পল্লী এলাকায় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর শহর এলাকায় আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ০২ শতাংশ। পল্লী ও শহর এলাকায় জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, প্রতি মাসেই শহর ও গ্রাম অঞ্চলের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের পৃথক মূল্যস্ফীতি সূচক তৈরি করে বিবিএস। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হল এক বছরে জীবনযাত্রার ব্যয় একই হারে বেড়েছে। এক বছর আগে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা লাগত একই পণ্য কিনতে বর্তমানে ১০৫ টাকা ৪৯ পয়সা লাগবে। আয় না বাড়লে এই পরিমাণ মূল্যের পণ্য কম কিনতে হবে ভোক্তাদের।
অবশ্য এক বছরে মূল্য ও মজুরি সূচক আগস্ট মাসে ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বেড়েছে বলেও জানিয়েছে বিবিএস।