অর্থ প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় যুক্তরাজ্য
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে কর ফাঁকি দেওয়ার মাধ্যমে কিংবা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ যুক্তরাজ্যে পাচার করার (মানি লন্ডারিং) অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে ইউনাইডেট কিংডম (ইউকে)।
দেশটি জানিয়েছে, গভর্নমেন্ট–টু–গভর্নেমেন্ট পর্যায়ে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে সহায়তা করা তাদের জন্য সহজ হবে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলাপ করে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের একটি প্রতিনিধি দল।
সিআইসি'র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কর ফাঁকি ও মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে তাদের পক্ষে আমাদেরকে সহায়তা করা সহজ হবে বলে জানিয়েছে প্রতিনিধি দলটি। এ জন্য সিআইসি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-সহ (বিএফআইইউ) অন্যান্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সমন্বিতভাবে কাজ করার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে তারা।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে তারা (ইউকে) সব ধরনের সহায়তা দেবে বলেও আমাদের আশ্বস্ত করেছে।"
এনবিআর সঙ্গে বৈঠকে তিন সদস্যের ইউকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের হেড অব পলিটিক্যাল অ্যান্ড গভর্নেন্স টিমোথি ডকেট।
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে একটি মেইল পাঠানো হলেও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে বৈঠক করে ইউকের আরেকটি প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা পাচারকৃত অর্থ প্রত্যাবাসনে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেয়।
আল জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে ৩৬০টি সম্পদের মালিক; বিভিন্ন দেশে ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মূল্যের সম্পদ রয়েছে তার।
এ তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিস্তারিত খোঁজ নিতে শুরু করেছে।
এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাইফুজ্জামান তার ট্যাক্স রিটার্নে ১৮.৭৭ কোটি টাকার সম্পদ ঘোষণা করেছেন। একই সময়ে নিজের আয় ঘোষণা করেছেন ৭৪ লাখ টাকা; যার ওপর তিনি ১৯.২৬ টাকা কর পরিশোধ করেছেন।
বাংলাদেশের আয়কর আইনে বলা আছে, যদি বিদেশে কোনো ব্যক্তির সম্পদ বা আয় থেকে থাকে, তাহলে দেশে তার ট্যাক্স ফাইলিংয়েও সেসব সম্পদ বা আয়ের তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
তবে, সিআইসি তথ্য অনুযায়ী, সাবেক ভূমিমন্ত্রী তার বিদেশি সম্পদের তথ্য ট্যাক্স ফাইলে প্রকাশ করেননি।
সিআইসি'র ওই কর্মকর্তা বলেন, "ব্রিটিশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এটি প্রাথমিক আলোচনা। আমরা কীভাবে তাদের সহযোগিতা নিতে পারি, এ বিষয়ে পরবর্তীতে আরো আলোচনা হবে।"
"আমরা এনবিআরের মাধ্যমে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি," যোগ করেন তিনি।