চতুর্থ দফা বন্যার মুখে সুনামগঞ্জ, ডুবেছে আমনক্ষেত
দুই মাসের ব্যবধানে চতুর্থদফা বন্যার মুখে সুনামগঞ্জ। গত তিনদিনের পাহাড়ি ঢল ও বর্ষণে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে সব আমনক্ষেত।
শুক্রবার ভোর থেকে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর উপজেলা সড়ক পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে গেছে। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে আমনক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে প্রায় সাড়ে চারশ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই পানি এসে নামছে ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে। ফলে পানিও বাড়ছে। শুক্রবার সকালে সুরমার পানি বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বিলম্বিত আমনধান নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই প্রথম দফা বন্যা হয় সুনামগঞ্জে। দ্বিতীয় দফা বন্যা হয় জুনের ৯ তারিখে। তৃতীয় দফা বন্যা হয় ১৯ জুন। এবার প্রায় দুই মাস পর আবারও বন্যাপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে এ বন্যা আমনের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। বন্যার কারণে আমনচাষ একমাস বিলম্বিত হলেও এখন সদ্য লাগানো আমনক্ষেত বন্যার পানিতে থৈথৈ করছে। তাছাড়া চতুর্থ বারের মতো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৎস্য খামারিদেরও ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে খামারের মাছ।
গত তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শুক্রবার সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কের বৈঠাখালি, ভাদেরটেক ও আনোয়াপুরে সড়ক ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তাঘাটেরও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, আমনক্ষেতে এখন কোমর পানি। দেখে বুঝার উপায় নেই এখানে আমন ক্ষেত ছিল। ক্ষেতের পাশে অসহায় তাকিয়ে আছেন অনেক কৃষক। তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না এক রাতের ব্যবধানে তাদের ক্ষেত এভাবে ডুবে যাবে।
বড়ঘাট গ্রামের কৃষক সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ''আমার সইত্তর বছরের জীবনে ইলা চচাইরবার পাইচবার বন্যা দেখছি না। গিরস্থি খরছিলাম টাইন্যা টুইন্যা। এখন পানি আইয়া বুরাইয়া নষ্ট খইরা গেছেগি।''
কুতুবপুর গ্রামের কৃষক সমিরুল ইসলামকে দেখা গেল তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে মাছের খামার নেট দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করছেন। তবে রাতেই তার মাছ ভেসে গেছে।
তিনি বলেন, ''বন্যায় চাইরবার মাছ ভাসাইয়া নিয়েছে। এখন আমনের সব রোয়া নষ্ট খরিলিছে। বন্যায় সব লাইটখাট অইগিছে। আমার ২০ কিয়ার জমির পানির নিছে। এখন আনা খাইয়া থাকতো অইব।''
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন কায়সার টিপু বলেন, তিনবারের বন্যার কারণে এ বছর সুনামগঞ্জে আমনচাষ একমাস বিলম্বিত হয়েছে। এখন চতুর্থ দফা পানি এসে ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এখন ঢল ও বর্ষণে আমানক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানি না নামলে এবার আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের এখানে ঢলের পানি নেমে পানি বাড়ছে। সকালে সুরমার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার অবস্থায় আছে। এভাবে চললে চতুর্থ দফা বন্যার শঙ্কা রয়েছে।