খানাখন্দ, হাঁটু-সমান কাদা: গ্রামীণ সড়কের ৮০ শতাংশেরই বেহালদশা
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতালীয়া-গয়াতলা মাটির ৬ কিলোমিটার রাস্তাটি পাকা করে ১০ ফুট প্রশস্ত করা হয় প্রায় দুই দশক আগে— যা অন্তত ৮ ইউনিয়নের মানুষের জন্য হয়ে ওঠে আশীর্বাদস্বরূপ। রাস্তাটি স্থানীয় বাস রুটের অংশ হওয়ায় উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াত হয়ে ওঠে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী।
তবে স্থানীয়দের ভাগ্যে এই আশীর্বাদ টেকেনি বেশি দিন। গত সপ্তাহে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চিতলীয়া-গয়াতলা সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট–বড় গর্ত আর খানাখন্দ। অনেক স্থানে সড়কের পাথর আর খোয়া সরে গিয়ে মাটি বের হয়ে এসেছে। যানবাহন চলাচল কমে গেছে। কিছু সংখ্যক ইজিবাইক ও ভ্যান দিয়ে যাত্রীরা হেলেদুলে যাতায়াত করছেন। আবার ভাড়াও বেড়ে হয়ে গেছে দ্বিগুণ।
৬ বছর ধরে রাস্তাটিতে চলছে না কোনো বাস। কৃষিপণ্য আর হাট-বাজারের মালামাল পরিবহন করতে বেড়েছে ভোগান্তি। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় কৃষক ইউনুস খালাসী বলেন, "রাস্তাটি যখন ভালো ছিল তখন ধান, পাট নিয়ে শরীয়তপুর শহর, কাজীরহাট বন্দর ছাড়াও শিবচরের বাজারে গিয়েও বিক্রি করতে পারতাম। এতে দরদাম করে বেশি দাম পেতাম। এখন দূরের হাট-বাজারের নিতে অনেক খরচ বেড়ে গেছে, তাই বাড়িতেই ফসল বিক্রি করে দেই। ব্যাপারীরা যে দাম দেয় তাই পাই। সড়ক নষ্ট হওয়ায় এখন আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত।"
ভালো রাস্তায় উন্নত জীবনযাত্রা
গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হওয়ার সঙ্গে সেখানকার জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কারণ রাস্তা ভালো হলেই তা স্থানীয় ক্ষেত-খামারকে বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে এবং এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হন। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো গ্রামীণ অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিচ্ছে; একইসঙ্গে রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রীরাও পড়ছেন ভোগান্তিতে।
গত ৭ বছর ধরে চিতালীয়া-গয়াতলা সড়কে কোনো মেরামত কাজ না হওয়ায় স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লিটন সরদার বা ইজিবাইক চালক মিরাজ শেখের মতো এই রাস্তা ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বিপাকে। যাতায়াতের সময় বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে খরচও।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলীয়া-গয়াতলা সড়কের মতো, জেলার (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়কের ৫০ শতাংশ পাকা রাস্তাই ভাঙাচোরা আর খানাখন্দ।
গ্রামাঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী সরকারী সংস্থা স্থানীয় এলজিইডি-এর তথ্য বলছে, দেশের ১.২৯ লাখ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের প্রায় ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কমবেশি মেরামতের প্রয়োজন রয়েছে।
গত বছর, গ্রামীণ রাস্তার ৬০ শতাংশের অবস্থা খারাপ ছিল; অর্থাৎ, এ বছর গ্রামীণ সড়কগুলোর অবস্থা আগের চেয়েও আরও খারাপ হয়েছে। কিছু অঞ্চলে আবার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আরও বেশি।
এলজিইডি সমীক্ষা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে চাহিদার মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক মেরামতের জন্য।
জুলাই অভ্যুত্থানের প্রভাব
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান— চলতি অর্থবছরে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অতি বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক সুর্যোগসহ গত জুলাইয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন, আগস্টে সরকারের পতন এবং নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসনিক ও সব ধরনের উন্নয়ন কাজ থেমে গেছে। এসব করাণে চলতি অর্থবছরে ভাঙা সড়কের পরিমাণ ও দুর্ভোগও বেড়েছে।
এলজিইডির সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুস সবুর বলেন, "মেরামতে যত দেরি হবে, মেরামত খরচও তত বাড়বে।"
তিনি জানান, বর্তমানে এলজিইডির সড়কগুলো মেরামতে প্রয়োজন ২১,৪৮৫ কোটি টাকা। যদিও এই খাতে সরকারের বরাদ্দ ৩,৩০০ কোটি টাকা।
"ফলে চাহিদার তুলনায় এত কম বরাদ্দ দিয়ে বিশাল একটি অংশ মেরামত করা সম্ভব হবে না," বলেন তিনি।
এই প্রকৌশলী আরও জানান, চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ দিয়ে আনুমানিক ৫,৫০০ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে। কত কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা যাবে, তা নির্ভর করবে অর্থছাড় ও দরপত্রের ওপর। কারণ প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ অর্থবছরের শুরুতে দেওয়া হয়, তার পুরোটা ছাড় করে না সরকার।
তবে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকেও পুরাতন কিছু সড়ক মেরামত করা হয়। মেরামতে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট থেকে ব্যয় হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এলজিইডির সড়কগুলো ৩–৫ বছরের মধ্যে পিরিয়ডিক মেরামত করতে হয়। তবে তহবিল বরাদ্দ কম হওয়ায় মেরামতের কাজ চালাতে হয় সীমিত পরিসরে। এছাড়া বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের করাণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে বলে জানান কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন ডিপার্টমেন্টের (আইএমইডি) এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, অদক্ষ ঠিকাদার এবং দুর্নীতির কারণে সড়ক প্রকল্পগুলো টেকসই হয় না।"
বৃষ্টি–বন্যা বাড়ায় দুর্ভোগ
লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক সড়কের ৬ কিলোমিটার হাজিরপাড়া-চৌপল্লী সড়কটি গত প্রায় ২ বছর যাবত যানচলাচলের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। সাবেক সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের নিকট বারবার বলেও সড়কটি যানবাহন চলাচলে উপযোগী করতে পারেননি স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরকার পরিবর্তনের পরপরই আগস্টের প্রবল বন্যায় আগের সেই ভাঙা সড়কটিতে এখন আর মাটিও নেই। দ্রুত যোগাযোগের একমাত্র এই সড়কটির বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রামের মানুষেরা।
শুধু হাজিরপাড়া চৌপল্লী সড়কই না লক্ষ্মীপুর জেলার অধিকাংশ সড়কে এখন যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। বন্যার পর সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র।
খুলনার একাধিক গ্রামীণ এলাকায় প্রধান সড়ক কাঁচা মাটির হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সামান্য বর্ষায় এইসব রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে উঠে, ফলে হাঁটু সমান কাদার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় মাগুরখালী ইউনিয়নের বাঘারদাইড় থেকে গাজীনগর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, সেখান থেকে মানুষের চালাচল একেবারেই অসম্ভব।
৩.৫ কিলোমিটারের এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৫টি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া এই সড়ক পাড়ি দিয়েই ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
সমির নামে ওই এলাকার বাসিন্দা বলেন, "বর্ষা শুরু হলে আমাদের এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। হাঁটু সমান কাদার মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে প্রায়ই পিছলে পড়ে যাই। বিশেষ করে, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক।"
একই অবস্থা রয়েছে খুলনার রূপসা উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের একটি সড়কে। ৬ বছর ধরে সংস্কার না করায় ভাঙাচোরা, কাঁদা-ধুলির সড়কে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
এদিকে নওগাঁ সদরের ভীমপুর গ্রামের কলেজছাত্রী মারুফা আক্তার জানান, "আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে সোজা মাটির রাস্তা নওগাঁ শহরে প্রবেশ করেছে। প্রায় ২০ কিলোমিটার এই সড়ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কের পশ্চিম প্রান্তে ভীমপুর পুলিশ ফাঁড়ি। পূর্ব প্রান্তে নওগাঁ শহর। কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা হাঁটু পরিমাণ কাঁদা হয়।"
তিনি বলেন, "এ সময় রাস্তা দিয়ে কেনো মানুষ চলাচলের অবস্থা থাকে না। বয়স্ক মানুষকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার করতে হয়।"
"এমন অবস্থা আমি দেখছি গত ১০ বছর ধরে। নির্বাচনের আগে সবাই এই রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন; কিন্তু ভোট চলে গেলে কেউ আর ফিরেও তাকান না," যোগ করেন এই শিক্ষার্থী।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ছোট চাঙ্গইর গ্রামে প্রবেশ করতে হয় ভেবরকুড়ি মৌজার থেকে তালগাছী রাস্তা দিয়ে। মাটির রাস্তা দিয়ে এই গ্রাম থেকে স্থানীয়রা ধান-সবজি ভ্যানে কর বাজারে নিয়ে যান।
এই গ্রামের বাসিন্দা স্মৃতি খাতুন বলেন, "বর্ষার মৌসুমে পরিস্থিতি এতোই খারাপ থাকে যে, এই রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় ভ্যানচালকেরাও অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। সাধারণ মানুষের তো উপায় নেই। বাড়ি যেহেতু এই এলাকায়, তাই এভাবেই চলছে বছরে পর বছর।"
রাস্তা ভালো হলে রক্ষা পায় বন্যা থেকেও
আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী জেলার ৪,৩০০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের পঞ্চমাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কিছু রাস্তা আবার ভালো রয়েছে।
ফেনী-সোনাগাজী সড়কের সঙ্গে গ্রামীণ বাজার কুঠিরহাট সংযোগকারী ৩ কিলোমিটার রাস্তা বন্যার পানি কমে যাওয়ার পরেও ভাল অবস্থাতে ছিল। জেলা এলজিইডি'র শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, এই রাস্তাটি নতুন নির্দেশিকা অনুসারে সুষ্ঠু তদারকির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়; মূলত ভালোভাবে নির্মাণ করার কারণেই রাস্তাটি অক্ষত রয়েছে।
ফেনীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক বলেন, "ভালো মানের রাস্তা তৈরি করার জন্য তদারকির ভূমিকা থাকতে হবে।" তিনি জানান, কয়েক দশকের মধ্যে ফেনী অঞ্চলে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পরেও জেলার ৭০ শতাংশ গ্রামীণ রাস্তাঘাট এখনও ভাল অবস্থায় রয়েছে।
এ বছর রাস্তা মেরামতের জন্য ইতোমধ্যেই তারা অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়েছেন জানিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, "বন্যার ক্ষয়ক্ষতিতে সাড়া দেওয়ার জন্য দুটি বড় প্রকল্প প্রস্তুত করা হচ্ছে; নোয়াখালীর পাশাপাশি ফেনীও এই তালিকার একটিতে থাকবে।"
১০ বছরের লাইফ-টাইম শেষ বেশির ভাগ এলজিইডি সড়কের
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তায় যান চলাচল বেড়ে গেছে। বাণিজ্যিক পরিবহন চলাচল বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ২০২১ সালে এলজিইডি সড়ক টেকসই করতে একটি গেজেট প্রণয়ন করে।
সর্বশেষ ২০০৪ সালের গেজেট অনুযায়ী, ১২ থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ততায় উপজেলা সড়ক নির্মাণ করা হতো। নতুন প্রস্তাবে উপজেলা সড়ক সর্বোচ্চ ২৪ ফুট প্রশস্ত করা হয়। তবে শিল্পাঞ্চল বা বাণিজ্যিক যান চালাচল করে, এমন সড়ক ৩০ ফুট পর্যন্ত নির্মাণ করা যায়। ইউনিয়ন সড়ক ১২ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ততায় নির্মাণ যায়।
২০২১ সালের গেজেট অনুযায়ী, এলজিইডির আওতাধীন সড়কের সর্বনিম্ন পুরুত্ব ৮৯০ মিলিমিটার। এর আগে, সর্বনিম্ন ৫৮২ মিলিমিটার পুরত্বে এলজিইডি সড়ক নির্মাণ করতো। জলবায়ু পরিবর্তনে ৬০ থেকে ৭০ গ্রেড বিটুমিন ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় এখন।
কিন্ত ২০২১ সালের গেজেট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মাত্র ১০,০০০–১২,০০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়েছে। ফলে আগে নিমির্ত সড়কগুলোর ১০ বছরের লাইফটাইম অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এতে এসব সড়ক খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। মেরামত করতে হয় ঘন ঘন এবং মেরামতে খরচও বেশি লাগছে বলে জানান দেওয়ান আব্দুস সবুর।
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে সড়ক বেশি দিন টেকে না, তার প্রধান কারণই হলো সময়মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ধারণা করা হয়, ওভার লোডিং সড়ক টেকসই না হওয়ার কারণ। তবে মানসম্মত রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে লাইফটাইমের চেয়েও বেশি দিন টিকবে বাংলাদেশের সড়ক।"
নতুন সড়ক নির্মাণের চাপ পড়ছে মেরামত ব্যয়ে
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর নতুন নতুন সড়ক তালিকাভুক্ত হচ্ছে। ফলে এসব সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে মেরামতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে পারছে না সরকার।
এলজিইডির কর্মকর্তারা জানান, নতুন সড়ক তালিকাভুক্তির জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আমলাদের চাপ থাকে। আবার গ্রামে অনেক কৃষি জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে, সেই বাড়ির জন্য রাস্তার তালিকাভুক্তির আবেদন জানায়। এতে একদিকে কৃষি জমি নষ্ট হয়, অন্যদিকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন হয়।
অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণে কারণে প্রত্যেকে যার যার বাড়ি জন্য আলাদা সড়ক নির্মাণ করেন এবং এলজিইডিকে পাকার করার জন্য চাপ দেন। এতে নতুন সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ দিতে গিয়ে পুরাতন সড়ক মেরামতে বরাদ্দ দেওয়া হয় না বলে জানান তিনি।
এলজিইডি সূত্র জানায়, বর্মতানে এলজিইডির কাঁচা সড়ক রয়েছে ২,১১,৩১৪.৫০ কিলোমিটার। এছাড়া, প্রায় ১৭,০০০ সড়ক তালিকাভুক্তির জন্য গেজেটের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রায় ৯০,০০০ সড়ক তালিকাভুক্তির জন্য প্রস্তাব আসে— যেখান থেকে ১৭,০০০ সড়ক তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন।
চলতি অর্থবছরে নতুন সড়ক নির্মাণের জন্য উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ রয়েছ ২০,১৮০ কোটি টাকা।
টিবিএসের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, খুলনার আউয়াল শেখ, শরীয়তপুরের কাজী মনিরুজ্জামান এবং লক্ষ্মীপুরের সানা উল্লাহ সানু প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন।