আমিরাতের টেক হাবকে টেক্কা দিতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের এআই পাওয়ারহাউজের পরিকল্পনা সৌদির
প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে সৌদি আরব নতুন একটি প্রযুক্তি হাব প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। এ প্রকল্পের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্র-সমর্থিত এ প্রকল্পের আওতায় এআই উন্নয়নে ডেটা সেন্টার, স্টার্টআপ এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করবে দেশটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, 'প্রজেক্ট ট্রান্সসেন্ডেন্স' নামক প্রকল্পটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
এটির প্রধান লক্ষ্য হলো নতুন প্রতিভা তৈরি, স্থানীয় প্রযুক্তিখাতের [লোকাল ইকোসিস্টেম] বিকাশ এবং আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা।
সৌদি আরব ইতোমধ্যেই এআই উন্নয়নে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। আলাত-এর মতো একই ধরনের মডেল অনুসরণ করে প্রজেক্ট ট্রান্সসেন্ডেন্স স্থাপন করা হবে।
টেকসই উৎপাদন নিয়ে কাজ করা আলাত সৌদি আরবের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) সহায়তায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের মূলধনে পরিচালিত হয়। আলাত-এর নেতৃত্বে রয়েছেন আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
তবে প্রজেক্ট ট্রান্সসেন্ডেন্স নিয়ে সৌদি সরকার কোনো মন্তব্য করেনি। পিআইএফ ও অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডের গুগলের যৌথভাবে তৈরি করা একটি এআই হাবের মাধ্যমে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ হাব প্রকল্পে উভয় প্রতিষ্ঠান পাঁচ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। এর আওতায় রয়েছে আরবি ভাষার জন্য একটি এআই মডেল তৈরির কাজও। বুধবার অ্যালফাবেট-এর শেয়ারের মূল্য ৪ শতাংশ বেড়ে ১৭৬.৫১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
প্রজেক্ট ট্রান্সসেন্ডেন্সের অন্যতম লক্ষ্য হলো বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারি গড়ে তোলা, যেখানে সৌদি আরব অবকাঠামো ও মূলধন সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, প্রকল্পের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
এ প্রকল্পটি একাধিক সৌদি সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এটির মূল লক্ষ্য হবে এআই অবকাঠামো ও স্টার্টআপে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে এআই দক্ষতায় সৌদি আরবের ব্যবধান কমানো।
সৌদি কর্মকর্তারা জানান, দেশটি এমন একটি এআই কোম্পানি গড়ে তুলতে চায় যা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কাজ করবে এবং আবু ধাবির জি৪২ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মতো বড় আকারের হবে।
উল্লেখ্য, এআই সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ কৌশলের অংশ। এ ভিশনের লক্ষ্য দেশটির আয়ের উৎসকে বহুমুখী করা। এর মাধ্যমে সৌদি আরব চলতি দশকের বাকি সময়ে ঘরোয়া প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা অর্জন করে ২০৩০ সাল থেকে তা রপ্তানির মাধ্যমে এআই খাতে শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে স্থান করে নিতে চায়।
ইতোমধ্যে এ খাতে নিবেদিত গবেষণা কেন্দ্র ও মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি-এর মতো বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল তৈরির কাজ চলছে।
তবে সৌদি আরব আগামী কয়েক বছর বাজেট ঘাটতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্রাউন প্রিন্সের আরেকটি বড় প্রকল্প ট্রিলিয়ন ডলারের নিওম ডেভেলপমেন্ট অর্থায়ন সংকটে পড়েছে।
অন্যদিকে, পিআইএফ সম্প্রতি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জায়ান্ট অ্যান্ড্রিসেন হোরোভিটজের সঙ্গে একটি নতুন তহবিল গঠনের জন্য আলোচনা করছে। এ তহবিল এআই খাতে বিনিয়োগে ব্যবহার করা হবে এবং এর সম্ভাব্য আকার ৪০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।