সিনহা হত্যা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামী লিয়াকতের পক্ষে রিভিশন আবেদন
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে হত্যার ঘটনায় সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের দায়ের করা হত্যা মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে।
মামলার এক নম্বর আসামী বরখাস্ত হওয়া পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতের পক্ষে এই রিভিশন আবেদন দায়ের করা হয়েছে।
আজ রোববার (৪ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে লিয়াকতের পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন ঢাকার আইনজীবী মেজবাহ সালাউদ্দিন ও কক্সবাজারের অ্যাডভোকেট ফরহাদ শাহরিয়ার। আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
লিয়াকতের পক্ষের আইনজীবী মেজবাহ সালাউদ্দিন জানান, গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। সেই মামলার আদেশের বিরুদ্ধে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। কারণ, সিনহার বোনের মামলাটিতে বিচার প্রক্রিয়া আইনের ২০৫ডি অনুচ্ছেদ অনুসরণ করা হচ্ছে না। এতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রিভিশনের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদনটি গ্রহণ করে আগামী ২০ অক্টোবর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এব্যাপারে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সিনহা হত্যা মামলার বাদী শারমিন ফেরদৌস বলেন, অভিযুক্তরা নিজেদের অপরাধ থেকে বাঁচতে নানা ভাবে প্রক্রিয়া চালাতে পারেন। আমরা আমাদের কথা আদালতে তুলে ধরছি। আদালত রিভিশন আবেদনের শুনানীর দিন ঠিক করেছেন বলেও জেনেছি। নির্ধারিত দিনে আমাদের যুক্তিও তুলে ধরবো। সঠিক-বেঠিক বিচার করার এখতিয়ার বিজ্ঞ আদালতের। আমার অভিপ্রায়, ভাইকে নির্মমভাবে হত্যার ন্যায়-বিচার পাওয়া।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের কাছে বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের হাকিম আদালতে নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেখানে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ১ নম্বর এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ২ নম্বর আসামী করা হয়।
মামলার পর ওসি প্রদীপ-সহ সাত পুলিশ সদস্য ৬ আগস্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অন্য দুই আসামি পলাতক।
মামলায় সহযোগী আসামীসহ বর্তমানে কারান্তরীন রয়েছেন ১৪ জন। র্যাব মামলাটি তদন্ত করছে।
তদন্তের অংশ হিসেবে সংস্থাটি, মামলার ১৩ আসামীকে নানা মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এপর্যন্ত মামলায় ১২ আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে, অন্যতম অভিযুক্ত ওসি প্রদীপ সর্বোচ্চ ১৫ দিন রিমান্ডে থাকলেও তিনি স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেননি। আর নতুন যুক্ত হওয়া আসামী কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে সম্প্রতি ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে তাকে এখনও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
এদিকে, সিনহা হত্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গত সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে সেই প্রতিবেদনে কী আছে, তা এখনও খোলাসা করেনি মন্ত্রণালয়টি।