উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প, সংঘর্ষে নিহত ৪
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'গ্রুপের সংঘর্ষে ৪ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে এ সংঘর্ষের শুরু হয় বলে রাত ১০ টার দিকে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, নিহতদের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। হামলা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আনসারের এক সদস্যও আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম জানান, উখিয়ার কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র নতুন ও পুরাতন রোহিঙ্গাদের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন গুলিবিদ্ধ ও একজনকে গলাকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। উক্ত ক্যাম্পে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষ থেমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।
এর আগে গত ৪ ও ৫ অক্টোবর দু'পক্ষের সংঘর্ষে ৩ জন রোহিঙ্গা নিহত হন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৯ রোহিঙ্গা ডাকাতকে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক করা হয়। সপ্তাহ ধরে চলমান এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হলো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, কুতুপালংয়ের অদূরবর্তী গভীর জঙ্গলে লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সশস্ত্র মুন্না গ্রুপের সেকেন্ড ইন কমান্ড গিয়াস উদ্দিকে তার প্রতিপক্ষ বাহিনী পিটিয়ে হত্যা করেছে। এসময় ছেলেকে বাচাঁতে গিয়ে গিয়াস উদ্দিনের মা বাবাও ঘটনাস্থলে মারা যান। এদিকে উত্তেজিত রোহিঙ্গারা মুন্না গ্রুপের আরেক সদস্যকে জবাই করে হত্যা করেছে।
লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আজিজুল হক, ছৈয়দ নুর ও শামসুজ্জোহা নামের তিন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, গিয়াস উদ্দিন ও তার বাবা-মার মৃত্যুও খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লম্বাশিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে ২৫ আগষ্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কুতুপালং আশ্রয় নিলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে উখিয়ার গভীর জঙ্গলখ্যাত লম্বাশিয়ায় পুনর্বাসন করে। সেখানে মুন্না গ্রুপ গড়ে তুলে একটি সশস্ত্র বাহিনী। এ বাহিনীর মাধ্যমে মুন্না গ্রুপ চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসছিল বলে অভিযোগ। অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় ছিল তার প্রধান বাণিজ্য। তার কথামতো টাকা না দিলে জবাই করে হত্যা করা হতো বলে না প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন।