মাহমুদউল্লাহদের নিয়ে ফাইনালে শান্তরা
১৬৪ রানের লক্ষ্য। ৪১ ওভারে নিশ্চয়ই কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এই রান করতে গিয়ে তামিম ইকবালের দল দিক হারালো বারবার। ম্যাচের রং এতটাই বদলালো যে, শেষ ওভার পর্যন্ত গড়ালো খেলা। তবে তীরে তরী ভেড়ানো হয়নি তামিমদের। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে তামিম একাদশকে ৭ রানে হারিয়ে দিয়েছে শান্ত একাদশ।
এই হারে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ থেকে ছিটকে গেল একটি জয় পাওয়া তামিম ইকবালের দল। তিন জয়ে ফাইনালে উঠলো নাজমুল একাদশ। তামিমদের দল হেরে যাওয়ায় ফাইনালের টিকেট পেয়ে গেছে দুটি ম্যাচে জয় পাওয়া মাহমুদউল্লাহ একাদশ। আগামী ২৩ অক্টোবর মিরপুরে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে নাজমুল একাদশ। ১৫ ওভার পর বৃষ্টি শুরু হয়, খেলা বন্ধ থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা। সময়ের কথা বিবেচনা করে ম্যাচ নামিয়ে আনা হয় ৪১ ওভারে। মুশফিকুর রহিমের ৫১ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৪০ রানে ১৬৫ রান তোলে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ২ রান কমানো হয়। তামিম একাদশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৪ রান। এই রান করতে নেমে শুরুটা ভালো না হলেও গুছিয়ে উঠেছিল তামিমের দল। কিন্তু মাঝপথে দিক হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছানো হয়নি তামিম একাদশের। ৪০.৪ ওভারে ১৫৬ রানে অলআউট হয় তামিমের দল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলীয় ১০ রানেই ওপেনার এনামুল হক বিজয়কে হারায় তামিম একাদশ। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর চাপ কাটিয়ে তোলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ৬৮ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। ১০ রান করা অঙ্কনের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এরপর ইয়াসির আলী রাব্বি যোগ দিলেও তামিম রান চাকা ঘোরাতে থাকেন।
হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই ওপেনার। ১০০ পেরিয়ে থামেন তামিম। ৮৬ বলে ৬টি চারে ৫৭ রান করে আউট হন তিনি। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ছাড়া সেভাবে কেউ ব্যাট চালাতে পারেননি। মিঠুনের ২৯ রানে ম্যাচ গড়ায় শেষ ওভারে।
৬ বলে তামিমদের দরকার ছিল ১৫ রানের। দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে আশা জাগিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু পরের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রিশাদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৩৬ রানে ৪ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা তাসকিন আহমেদ। একটি করে উইকেট পান আল আমিন হোসেন, আবু জায়েদ রাহি ও নাসুম আহমেদ।
এরআগে ব্যাটিং করা নাজমুল একাদশের ওপর তেমন চাপ ছিল না। আগের দুই জয়ে ফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে ছিল তাদের। তবু টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা নাজমুল একাদশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ৯ রানেই ওপেনার সৌম্য সরকার সাজঘরে ফেরান তামিম একাদশের পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
কিছুক্ষণ পর নাজমুল হোসেন শান্ত দলের বিপদ বাড়ান অফ স্পিনার মাহেদী হাসান। ধীর-স্থিরভাবে খেলতে থাকা পারভেজ হোসেনকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই স্পিনার। দলের দুঃসময়ে হাল ধরতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। ৫ রান করে মুস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন তিনি।
২৫ রানেই ৩ উইকেট হারানো দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন সর্বশেষ ম্যাচে নাজমুল একাদশকে খাদের কিনার থেকে উদ্ধার করা মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নিয়ে থাকেন আগের ম্যাচে ১৪৭ রানের জুটি গড়া এ দুজন। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি।
১৫ ওভার শেষে বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। নাজমুল একাদশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ৫৪ রান। বৃষ্টির কারণে খেলা ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট বন্ধ থাকে। ম্যাচ নেমে আসে ৪১ ওভারে। বিরতির পরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক ও আফিফ। চতুর্থ এই জুটিতে ৯০ রান পায় নাজমুল একাদশ।
জুটি গড়ার পথে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্যাট হাতে ছন্দ ফিরে পাওয়া মুশফিক। ১০৩ ও ৫২ রানের ইনিংস খেলার পর এই ম্যাচে ৫১ রান করেন জাতীয় দলের অন্যতম এই ব্যাটিং ভরসা। ৭৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৫১ রান করা মুশফিক সাউফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।
এরপর আফিফও বেশি সময় টিকতে পারেননি। বাঁহাতি তরুণ এই ব্যাটসম্যান ৬১ বলে ৪টি চারে ৪০ রান করেন। আফিফের বিদায়ের পর নাজমুল একাদশের ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়ে। কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি দলের রানচাকা সচল রাখতে। তৌহিদ হৃদয় ১৩, ইরফান শুক্কুর ১১ ও নাসুম আহমেদ ১২* রান করেন। ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বোলার হওয়া সাইফউদ্দিন শেষের দিকে একাই নাজমুল একাদশকে চেপে ধরেন। মুস্তাফিজ ৩টি ও মাহেদী ২টি উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নাজমুল একাদশ: ৩৯.৩ ওভারে ১৬৫/১০ (ইমন ১০, মুশফিক ৫১, আফিফ ৪০, হৃদয় ১৩, নাসুম ১২*; সাইফউদ্দিন ৫/২৬, মুস্তাফিজ ৩/৩৬, মাহেদী ২/৩৪)।
তামিম একাদশ: ৪০.৪ ওভারে ১৫৬/১০ (তামিম ৫৭, অঙ্কন ২২, মিঠুন ২৯, সাইফউদ্দিন ১০; তাসকিন ৪/৩৬, আল আমিন ১/১৮, আবু জায়েদ ১/৩৮, নাসুম ১/২৭)।
ফল: নাজমুল একাদশ ৭ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: তাসকিন আহমেদ (নাজমুল একাদশ)
সেরা ব্যাটসম্যান: মুশফিকুর রহিম (নাজমুল একাদশ)
সেরা বোলার: মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (তামিম একাদশ)
সেরা ফিল্ডার: তামিম ইকবাল (তামিম একাদশ)