বাংলাদেশের অর্থনীতির উত্থান থেকে ভারত কৌশলগত সুবিধা নিতে পারে
ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল গত সপ্তাহে তাদের 'ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি এবং তাতে নানা দেশের অবস্থান উঠে আসে এ প্রতিবেদনে।
প্রকাশের পরপরই ভারতীয় রাজনীতিতে অগ্নি-সংযোগ করেছে এবারের প্রতিবেদন। গণমাধ্যম আর জনমানসে জন্ম দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। কারণ আর কিছুই নয়। বছরের দ্বিতীয়বারের এ পূর্বাভাস সংশোধনীতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় উৎপাদন প্রবৃদ্ধি ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে, এমন আভাস দেওয়া হয়।
আইএমএফ প্রাক্কালন অনুসারে, বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় এতে করে ১,৮৮৮ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে। ভারতে হবে ১,৮৭৭। অর্থাৎ, কিনা বাংলাদেশিরা বেশি আয়ের সুযোগ পাবে ভারতীয়দের চেয়ে। ব্যবধান তেমন গুরুতর না হলেও, এই অবস্থান রাজনৈতিক বিরোধে রসদ জুগিয়েছে। নতুনতর তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের অর্থনীতি ব্যবস্থাপনার রেকর্ড।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে এর মধ্যে ইতিবাচক সুযোগ সন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যম- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতামত কলাম লেখক সি রাজা মোহন।
তিনি লিখেছেন, ''অস্বীকার করার উপায় নেই, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের অর্থনৈতিক স্থবিরতা নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তবে ঢাকার অর্থনৈতিক পারফরমেন্স নিয়ে দিল্লি সরকারের প্রতি আক্রমণ শানিত করার মধ্য দিয়ে; বাংলাদেশের উত্থানের মাধ্যমে যে কৌশলগত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।''
আঞ্চলিক রাজনীতির এ কৌশলগত পরিবর্তন নিয়ে তিনি পাঁচটি পয়েন্টে আলোচনা করেন।
প্রথমত, বাংলাদেশের দ্রুত এবং ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি উপমহাদেশ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির মানসিক মানচিত্রে আমূল পরিবর্তন যোগ করবে। গত পাঁচ দশক ধরেই দক্ষিণ এশিয়া মানে ছিল; ভারত আর পাকিস্তান। বাংলাদেশের উত্থান সে ধারাবাহিকতা অনেকাংশে পরিবর্তন করছে।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের চেয়ে বড় অর্থনীতি হয়ে ওঠার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ওজন বাড়ছে নিঃসন্দেহে। এক দশক আগে বাংলাদেশের চাইতে পাকিস্তানের অর্থনীতি ৬ হাজার কোটি ডলার বেশি ছিল । আর আজ সেই একই ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। মার্কিন ডলার এখন ৮৫ টাকা এবং ১৬২ পাকিস্তানী রুপিতে লেনদেন হয়। পার্থক্যটা এখানে স্পষ্ট।
''আগামীতে এ অবস্থা খুব একটা পরিবর্তনের সুযোগ নেই। বাংলাদেশ তার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে, কিন্তু, পাকিস্তান তা করতে পারেনি। মুদ্রাস্ফীতির উপর ঢাকার নিয়ন্ত্রণ আছে, কিন্তু ইসলামাবাদের নেই,'' মোহন উল্লেখ করেন।
তৃতীয়ত, তিনি বলেছেন বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ঘিরে- সার্ককে পুনর্জীবিত করার বদলে আঞ্চলিক সহযোগীতা বৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। দিল্লি একটু কৌশলী হলে এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালকে নিয়ে একটি জোট গঠন করতে পারে। বাড়াতে পারে আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগীতা।
চতুর্থত, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতা পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ যেমন; চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে, যুক্তরাষ্ট্র বেশি মনোযোগ দিত ভারত ও পাকিস্তানের দিকে। কিন্তু, এখন বাংলাদেশে নিজ স্বার্থের নতুন সম্ভাবনা দেখছে বিশ্ব সেরা পরাশক্তিটি। বিশ্ব শক্তিদের এই আগ্রহে বাংলাদেশে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত যে সাহায্য পাবে, তা বলাই বাহুল্য।
সর্বশেষ যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো; ঢাকা-দিল্লি বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এর মাধ্যমে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে নিজ জাতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে ভারত। বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের চাইতে এখন দেড়গুণ বড়। এ দুয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা মজবুত করা গেলে পূর্ব ভারতে অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব। স্থলভাগ বেষ্টিত ভারতীয় রাজ্যগুলো এই সম্পর্কের সুফল পাবে সবচেয়ে বেশি।
- সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস