সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড আসলে কি নাশকতা?
বুধবার দিবাগত রাতে ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ নম্বর ভবনের কয়েকটি তলা।
রাত ১টা ৫২ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এরপর ১৯টি ইউনিটের ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে সেখানকার আগুন।
সচিবালয়ে এই আগুনের ঘটনা ধ্বংসের চিহ্ন যেমন রেখে গেছে, একইসাথে জন্ম দিয়েছে বেশকিছু প্রশ্নেরও।
কীভাবে এই আগুন লাগলো এখনো তা জানা যায়নি, তবে সামাজিক মাধ্যমে এনিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। অনেকে এটিকে পরিকল্পিত নাশকতা বলেই মন্তব্য করেছেন।
আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে নৌবাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, 'কোনও শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগেনি। এখানে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থান থেকে আগুনটা লেগেছে বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা। শর্টসার্কিটে হয়নি পরিকল্পিতভাবে কেউ হয়তো আগুন লাগিয়েছে।'
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহেদ কামালও আগুনের ঘটনা সম্পর্কে সচিবালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তিনটি জায়গায় একসঙ্গে আগুন দেখা গেছে। যখন স্পার্কিং হয়, যদি বিদ্যুৎ লাইনের শর্টসার্কিট হয়, এটা হতে পারে। তবে আমরা এটা এখনও নিশ্চিত বলবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত শেষ করছি। কিন্তু এটা হতে পারে। এটাই হয়েছে – আমরা তা বলবো না।
তিনি বলেন, 'সচিবালয়ের আগুন লাগার কারণ সম্ভবত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন ছিল। এক জায়গায় আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এটা হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক কারণ এখনও আমরা বের করতে পারিনি।'
সচিবালয়ের মতো সুরক্ষিত জায়গায় নাশকতার সুযোগ আছে কি-না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, 'অ্যক্সিডেন্ট তো যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তদন্ত না করে কিছু বলতে পারছি না।'
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, 'ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আমাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।'
সচিবালয়ে ঘাপটি মেরে থাকা শেখ হাসিনার দালালরাই তাদের অপকর্ম ঢাকতে ফাইলগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি বলেন, "বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের যারা চাটার দল ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম স্টেকহোল্ডার ছিল আমলাদের বৃহৎ একটা অংশ। এদের ওপর ভর দিয়েই হাসিনা এই দেশে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিলো।"
এদিকে আগুন নেভানোর সময় পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ দিতে সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুজ্জামান নয়ন আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। সোহানুজ্জামান তেজগাঁওয়ে স্পেশাল ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায়দায়িত্ব আছে কি না তা উদ্ঘাটন করতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া এ কমিটি সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদ্ঘাটন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধকল্পে সুপারিশ করবে।