কক্সবাজারে ১৫ দিনে ১৬ লাখ পর্যটক; ১,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে গত ১৫ দিনে আনুমানিক ১৬ লাখের বেশি পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন। এই ১৫ দিনে পর্যটন সংশ্লিষ্ট খাতে আনুমানিক ১ হাজার ৬ শত কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীদের সংগঠন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষ বলেছেন, কক্সবাজার মোট কত জন পর্যটক ভ্রমণে আসেন এবং কত টাকা ব্যবসা হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যাবে না। এই নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানও নেই।
তবে, আবাসিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজের সংখ্যা এবং কক্ষের ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় গত ১৫ দিনে ১৬ লাখের কম বা বেশি পর্যটক ভ্রমণে আসার তথ্য জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন বাড়তে থাকে। টানা ১৫ দিন ধরে (শুক্রবার পর্যন্ত) কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড় ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শনিবার থেকে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
আবুল কাশেম বলেন, "কক্সবাজারে বিভিন্ন মানের সাড়ে পাঁচশ আবাসিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজারের কম বা বেশি পর্যটকের জন্য রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। গত ১৫ দিনে প্রতিদিন গড়ে কখনও ১ লাখের বেশি আবার কখনও লাখের কিছুটা কম পর্যটক এসেছেন। এই হিসাব মতে, ১৫ দিনে ১৬ লাখের কম বা বেশি পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন বলে ধারণা করা যায়।"
এই ১৬ লাখ পর্যটক আবাসিক হোটেল ও মোটেলে অবস্থান নেয়ায় ২১০ কোটি টাকা ব্যবসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে সাড়ে ৫ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠান ৪ ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে বিলাসবহুল ও তারকা মানের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটি টাকা, মাঝারি মানের ২০০টি প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ছোট প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি টাকা করে মোট ১৫ দিনে ২১০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে জানায় হোটেল মালিক সমিতি।
আবুল কাশেম সিকদার জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের আগমন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আবাসিক প্রতিষ্ঠানে এখনো ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বুকিং রয়েছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলার সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, কক্সবাজারের ৫০০ রেস্তোরাঁ গত ১৫ দিনে আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।
সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর জানান, সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারছেন। ফলে ১৫ দিনে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করেছেন।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, ডুলাহাজারা সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় বাজার, সামুদ্রিক পণ্য এবং পরিবহণ খাতেও ভালো ব্যবসা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে অভিযোগ বক্স স্থাপন এবং অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, "অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে কয়েকটি আবাসিক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্র্যাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।"