পাখির আঘাতই কি দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান দুর্ঘটনার আসল কারণ?
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় ১৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। রোববার সকালে (২৯ ডিসেম্বর) জেজু এয়ারলাইন্সের বিমানটি মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে একটি দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়।
বিমানটি থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে ফিরছিল। এতে ১৮১ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭৯ জন মারা গেছেন। দুজন ক্রুকে ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করছে। দেশটির ন্যাশনাল ফায়ার এজেন্সির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাখির ধাক্কা এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটির পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে।
দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ কি পাখির আঘাত ছিল?
ফ্লাইট ৭সি২১১৬ বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি মুয়ানে পৌঁছায় স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে।
একজন দক্ষিণ কোরীয় পরিবহণ কর্মকর্তার মতে, বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু আকাশযান নিয়ন্ত্রণ একে পাখির আঘাতের সতর্কতা দেওয়ায় সেটি অবতরণ থেকে বিরত থাকে।
দুই মিনিট পরে, পাইলট 'মেডে' জানায় এবং আকাশযান নিয়ন্ত্রণ বিপরীত দিক থেকে অবতরণের অনুমতি দেয়।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্লেনটি চাকা বা অন্য কোন অবতরণ যন্ত্র ছাড়াই রানওয়েতে ছুঁয়ে যায়। এরপর এটি রানওয়েতে স্কিড করে এবং একটি দেয়ালে ধাক্কা লেগে তাতে আগুন ধরে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সিকে বলেন, তারা একটি "তীব্র শব্দ" শুনতে পান। এরপর একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ আসে।
মুয়ান ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রধান লি জিওং-হিউন একটি টেলিভিশন ব্রিফিংয়ে বলেন, প্লেনের পেছনের অংশ চেনা গেলেও, বাকিটা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, পাখির আঘাত এবং খারাপ আবহাওয়া দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তবে সঠিক কারণ এখনও তদন্তাধীন।
বিমানটির ফ্লাইট এবং ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইয়োনহাপ নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, রেকর্ডারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একজন যাত্রী তার আত্মীয়কে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, একটি পাখি "পাখার মধ্যে আটকা পড়ে" এবং বিমানটি অবতরণ করতে পারছিল না।
তবে কর্তৃপক্ষ এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি, বিমানটির আসলেই কোনো পাখির সাথে সংঘর্ষ ঘটেছিল কি না।
জেজু এয়ারের ব্যবস্থাপনা প্রধান জানিয়েছেন, এই দুর্ঘটনা "কোনো রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যার কারণে" ঘটেনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহণ বিভাগ জানিয়েছে, ফ্লাইটের প্রধান পাইলট ২০১৯ সাল থেকে এই পদে ছিলেন এবং তার ৬ হাজার ৮০০ ঘণ্টার ফ্লাইট অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং এয়ারলাইন নিউজের সম্পাদক জেফরি থমাস বিবিসিকে জানান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তার এয়ারলাইনগুলোকে "শিল্পের সেরা প্র্যাকটিস" হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং বিমান ও এয়ারলাইনটির "চমৎকার নিরাপত্তা রেকর্ড" রয়েছে।
তিনি বলেন, "এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।"
পাখির আঘাত কী?
পাখির আঘাত বলতে মূলত পাখির সাথে বিমানের সংঘর্ষকে বোঝায়। এটি খুব সাধারণ একটি ঘটনা। যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালে ১,৪০০ এর বেশি বার্ড স্ট্রাইক-এর (পাখির আঘাত) রিপোর্ট হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০০টি ঘটনা বিমানকে প্রভাবিত করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি।
সবচেয়ে পরিচিত পাখির আঘাতের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে। তখন একটি এয়ারবাস বিমানের সাথে রাজহাঁসের একটি ঝাকের সংঘর্ষ হলে সেটি নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে জরুরি অবতরণ করে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি
কিউকিউ বিশ্ববিদ্যালয়ে এভিয়েশন বিষয়ের অধ্যাপক ডাগ ড্রুরি এ বছর 'দ্য কনভার্সেশন'-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে লেখেন, বোয়িং বিমানগুলোর টারবোফ্যান ইঞ্জিন রয়েছে, যা পাখির আঘাতে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পাইলটদেরকে অনেক সকালে বা সূর্যাস্তের সময় বেশি সতর্ক থাকতে হয়, কারণ তখন পাখি বেশি সক্রিয় থাকে।
কিন্তু কিছু বিমান বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মুয়ান বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার কারণ পাখির আঘাত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এয়ারলাইন নিউজের সম্পাদক জেফরি থমাস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,"সাধারণত, পাখির আঘাত একাই একটি বিমান ধ্বংস করতে পারে না।"
অস্ট্রেলিয়ার বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জেফরি ডেল রয়টার্সকে বলেন, "আমি কখনোই এমন একটি পাখির আঘাত দেখিনি, যা ল্যান্ডিং গিয়ার খুলতে বাধা দিয়েছে।"