একটি সিগারেট ২০ মিনিট আয়ু কেড়ে নেয়, নারীদের আয়ু কমে বেশি: গবেষণা
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, আগে চিকিৎসকরা ধারণা করতেন, সিগারেট মানুষের আয়ুষ্কাল তারচেয়েও বেশি কমিয়ে দেয়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন-এর (ইউসিএল) গবেষকদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সিগারেট মানুষের জীবন থেকে গড়ে প্রায় ২০ মিনিট আয়ু কেড়ে নেয়। অর্থাৎ ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট মানুষের আয়ু প্রায় ৭ ঘণ্টা কমিয়ে দিতে পারে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দিনে ১০টি সিগারেট খাওয়া একজন ধূমপায়ী যদি ১ জানুয়ারি ধূমপান ছেড়ে দেন, তবে ৮ জানুয়ারির মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ একদিনের আয়ু বাঁচাতে পারবেন। ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধূমপান ছাড়া থাকতে পারলে তিনি এক সপ্তাহ আয়ু বাড়াতে পারবেন, আর ৫ আগস্ট পর্যন্ত ধূমপান ছাড়া থাকতে পারলে এক মাসের আয়ু বাড়াতে পারবেন। ধূমপান ছাড়তে পারলে এক বছরে ৫০ দিন পর্যন্ত আয়ুক্ষয় এড়ানো সম্ভব।
ইউসিএল-এর অ্যালকোহল ও তামাক গবেষণাদলের প্রধান গবেষক ড. সারাহ জ্যাকসন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, 'মানুষ সাধারণত ধূমপান ক্ষতিকর জেনেও ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ধূমপান না ছাড়লে ধূমপায়ীরা গড়ে জীবনের ১০ বছর আয়ু হারান।'
ধূমপান বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য রোগ ও মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীদের দুই-তৃতীয়াংশই ধূমপানজনিত কারণে মারা যান। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ধূমপানের কারণে মারা যায়।
এই গবেষণাটি যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অভ হেলথ-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে। ১৯৫১ সালে শুরু হওয়া 'ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি' এবং ১৯৯৬ সাল থেকে নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে পরিচালিত 'মিলিয়ন উইমেন স্টাডি'র সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়েছে।
২০০০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, গড়ে প্রতিটি সিগারেট মানুষের জীবন থেকে ১১ মিনিট কেড়ে নেয়। কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার এখন প্রায় দ্বিগুণ—একটি সিগারেট পুরুষদের জীবন থেকে ১৭ মিনিট এবং নারীদের জীবন থেকে ২২ মিনিট কেড়ে নেয়।
ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, 'অনেকেই ভাবেন কয়েক বছর আয়ু বছর হারালেও অসুবিধা নেই, কারণ বৃদ্ধ বয়সে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা ও দুর্বলতা সাধারণ বিষয়। কিন্তু ধূমপান জীবনের অসুস্থ সময়ের আয়ু সংক্ষিপ্ত করে না। ধূমপান মূলত মধ্যবয়সের তুলনামূলক সুস্থ সময়টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। …ফলে একজন ৬০ বছর বয়সি ধূমপায়ীর স্বাস্থ্য একজন ৭০ বছর বয়সি অ-ধূমপায়ীর মতো হয়ে যায়।'
কিছু ধূমপায়ী দীর্ঘজীবী হলেও বহু মানুষ ধূমপানজনিত রোগে ভুগে ৪০ বছরের কোঠায়ই মধ্যেই মারা যান। এটি নির্ভর করে ধূমপানের ধরন, সিগারেটের ধরন, সিগারেটে টান দেওয়া সংখ্যা ও গভীরতা এবং সিগারেটে থাকা বিষাক্ত পদার্থের প্রতি সংবেদনশীলতার ওপর।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলেছেন, ধূমপান সম্পূর্ণ বন্ধ করলেই কেবল স্বাস্থ্যের পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যাবে। আগের গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই। দিনে মাত্র একটি সিগারেট খাওয়ার ক্ষেত্রেও হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি দিনে ২০টি সিগারেট খাওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় মাত্র ৫০ শতাংশ কমে।
গবেষকরা লিখেছেন, 'যেকোনো বয়সে ধূমপান ছাড়লেই উপকার হয়। তবে যত আগে ছাড়া যায়, জীবন তত দীর্ঘ এবং স্বাস্থ্যকর হবে।'