৬, ৪, ৪, ৬, ৪, ৬; বিপিএল দেখল সোহান বীরত্ব
ফরচুন বরিশালের কাইল মেয়ার্সের শেষ ডেলিভারিটি সীমানা ছাড়া করে ছুটলেন নুরুল হাসান সোহান। দলকে জেতানোর আনন্দ উদযাপনে ব্যাটটা যেভাবে ঘোরাচ্ছিলেন তিনি, আপনার কাছে তরবারি মনে হতে পারে। আদতেই ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করেছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। শেষ ওভারে জয়ের জন্য রংপুরের যখন দরকার ২৬ রান, সোহান হয়ে উঠলেন বরিশালের জন্য 'যমদূত'। ছক্কায় শুরু, ছক্কায় শেষ; মাঝে থাকলো চার-ছক্কার ফুলঝুরি। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে শেষ ওভারে ৩০ রান তুলে রংপুরকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বিশাল লক্ষ্যে ধীর-স্থির শুরুর পর জয় যখন দূরের পথ হয়ে উঠছিল, তখন কাণ্ডারী হয়ে দেখা দেন দুই পাকিস্তানি ইফতিখার আহমেদ ও খুশদিল শাহ। এ দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে ব্যবধান কমে আসে, জাগে রংপুরের জয়ের সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনার পথও ছিল খুব কঠিন। কিন্তু সোহান বীরত্বে সেটাও সম্ভব হলো, চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দুর্বার পথচলায় আরেকটি জয় যোগ হলো রংপুরের ঝুলিতে। রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে দল ও নিজেকে রেকর্ড বইয়ে জায়গা করে দিয়েছেন সোহান। বিপিএলের ইতিহাসে শেষ ওভারে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এটাই।
বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। বিপিএলে এটা তাদের ষষ্ঠ জয়, শিরোপা প্রত্যাশী দলটিকে এখনও কেউ হারের স্বাদ দিতে পারেনি। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষ দল রংপুর। চলতি আসরে ফিরতি ম্যাচে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বড় রান তুলেও হৃদয় ভাঙা হার মেনে নিতে হলো তামিম ইকবালের দল বরিশালকে। আগের দেখায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে বরিশাল। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে তারা।
বড় রান তাড়া, শেষ ওভারে সর্বোচ্চ রান তুলে জয়, রংপুরের টানা ছয় জয়; অনেক রেকর্ডের ভিড়ে আছে বিতর্কও। ১৯তম ওভারে যেমন শেখ মেহেদি হাসানের আউট নিয়ে দেখা যায় নাটকীয়তা। জাহানদাদ খানের বলে ব্যাট চালান তিনি, ক্যাচ উঠলেও সোহানের সঙ্গে উইকেটে ধাক্কা লাগায় ক্যাচ নিতে পারেননি বরিশালের পাকিস্তানি পেসার। 'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড' এর নিয়ম অনুযায়ী আউট ঘোষণা করা হয় শেখ মেহেদিকে। বল বাতাসে থাকলে বা ক্যাচের সম্ভাবনা থাকলে অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যান বাধা দিলেও আউট হন শট খেলা ব্যাটসম্যান। বল নিচে থাকলে বা রান আউটের সম্ভাবনা থাকলে আউট হতেন সোহান।
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ শেষে মাঠে দেখা যায় অন্যরকম উত্তেজনা, যা খেলার মাঠে শোভন কিছু নয়। ম্যাচের পর দুই দলের ক্রিকেটাররা সাধারণত হাত মেলান, বরিশাল-রংপুরের ক্রিকেটাররাও সেটাই করছিলেন। এর মাঝেই টেলিভিশনে দেখা যায়, রংপুরের কারও দিকে তেড়ে যাচ্ছেন উত্তপ্ত তামিম। বরিশাল অধিনায়ককে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছিলেন রংপুরের এক কর্মকর্তা। এই ঘটনায় কোনো দল আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরের ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলসের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়ান তামিম।
ম্যাচ শেষে যে উত্তেজনা দেখা যায়, ম্যাচেও ছিল এমন রেশ। টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বরিশাল ব্যাট হাতে শাসন চালায়। অধিনায়ক তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, কাইল মেয়ার্স, ফাহিম আশরাফদের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৯৭ রান তোলে বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। জবাবে ইফতিখার ও খুশদিলের ব্যাটে ঠিক পথে থাকা রংপুরকে জয় এনে দেন ব্যাটে হাতে তাণ্ডব চালানো ম্যাচসেরা সোহান। অধিনায়কের বীরত্বে শেষ বলে জয় নিশ্চিত হয় তাদের।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় রংপুরের শুরুটা যদিও ভালো ছিল না, দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় তারা। ১ রান করেই ফিরে যান হেলস। দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়েন তৌফিক খান ও সাইফ হাসান। এ দুজন দলের প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত রান তুলতে পারেননি। সাইফ ১৯ বলে ২২ ও তৌফিক ২৮ বলে ৩৮ রান করে আউট হন। ৬৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন ইফতিখার ও খুশদিল। চতুর্থ উইকেটে ৫৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন তারা।
ইফতিখার ৩৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৮ রান করেন। খুশদিলও খেলেন ৪৮ রানের ইনিংস, তবে তিনি আরও দ্রুত ব্যাট চালিয়েছেন। ২০০ স্ট্রাইক রেটে ২৪ বলের ইনিংসে ২টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ ওভারে চলে সোহান শো। মেয়ার্সের করা ওভারে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩০ রান তোলেন তিনি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। বরিশালের জাহানদাদ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান তানভীর ইসলাম, শাহিন আফ্রিদি, ফাহিম আশরাফ ও রিশাদ হোসেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বরিশালের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন শেষ ওভারে ৩০ রান হজম করা মেয়ার্স। ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান ২৯ বলে একটি চার ও ৭টি ছক্কায় অপরাজিত ৬১ রান করেন। ৩৪ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪০ রান করেন তামিম। ৩০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪১ রান করেন ব্যাট হাতে কঠিন সময়ে থাকা শান্ত। ১৮ বলে ২৩ রান আসে তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। শেষ দিকে ঝড় তোলা ফাহিম ৬ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ রান করেন। রংপুরের কামরুল ইসলাম রাব্বি ২টি এবং আকিফ জাভেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন একটি উইকেট পান।