বাংলাদেশের মতো ব্যাংক লোপাট, অর্থ পাচার পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয়নি: গভর্নর
বাংলাদেশের মতো ব্যাংকখাত থেকে ঋণের নামে এতো পরিমাণে অর্থ লোপাট ও টাকা পাচার পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, "মালয়েশিয়াতে কিছুটা অনিয়ম হলেও বাংলাদেশের মত এতো পরিমাণে হয়নি।"
আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) হোটেল সোনারগাঁওয়ে সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত 'ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ' শীর্ষক ১০টি রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী ব্যাংকের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, "যে সমস্ত বড় বড় গ্রুপ ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ করেছে, সেই টাকা উদ্ধারেও আমরা বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। তাদের থেকে আমরা ভালো পরিমাণেই সাড়া পাচ্ছি।"
"এছাড়া যারা বিদেশে ১০০ কোটি, ২০০ কোটি টাকা নিয়ে গেছেন— তাদের টাকা উদ্ধারে বিদেশি লিগাল ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করা হবে, তারা উদ্ধার করে দিতে পারলে তাদেরকে ১০ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
গভর্নর আরও বলেন, "আমাদের এখন যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে চার মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করা সম্ভব। বর্তমানে বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ রয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার।"
তিনি বলেন, "গত ছয় মাসে আমাদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি হয়েছে নেট ৩ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলার। এই ৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমাদের এই সময়ে বেশ কাজে দিয়েছে।"
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন গঠন হয়, তখন সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের মতো বিদেশি পেমেন্ট ওভারডিউ ছিল— যা এখন মাত্র ২০০ মিলিয়নে চলে এসেছে বলে জানান তিনি।
গভর্নর আরও বলেন, "গুড গভর্নেন্স (সুশাসন) দেশে ফিরে আসায় এবং দুর্নীতি কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স বেড়েছে। আমাদের যে পলিসি আছে, সেখানে বড় রকমের কিছু বৃদ্ধি না করলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জ রেট ১২২ টাকা; সরকার ২.৫ শতাংশ দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ৭,০০০ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে।"
"সরকার বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্স বৃদ্ধি করছে ,কিন্তু ইনটেনসিভ (প্রণোদনা) দেওয়াটা বন্ধ করা হয়নি। যেকোনো পরিমাণ টাকা পাঠালে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিষয়ে সংবেদনশীল; এই জায়গাগুলোকে সংবেদনশীল রয়েছে সরকার," যোগ করেন তিনি।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আর বলেন, "ইদানিংকালে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। অ্যাগ্রিগেশন অব রেমিট্যান্স। আমরা দেখছি, কিছু সময় দুবাই থেকে রেমিট্যান্স বেশি আসছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কম আসছে।"
"কিছুদিন আগে একটি ব্যাংক একইদিনে ১২১ টাকায় ডলার কিনে, কিছুক্ষণ পরে আবার ১২৭ টাকায় ডলার কিনেছে। হঠাৎ করে ৫-১০ টাকা বেড়ে যাওয়া পৃথিবীর কোনো দেশে হয় না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডলারের দাম বাড়লেও ১০ পয়সা, ২০ পয়সা বাড়ে।"
"প্রবাসে যে পরিমাণ বাংলাদেশি রয়েছে, আমরা সেই পরিমাণে রেমিটেন্স এখনও পাচ্ছিনা। আমাদের প্রবাসীরা গড়ে ৩০০ ডলার মাসে আয় করেন। যদিও ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসীরা প্রায় ১,২০০ থেকে ১,৫০০ ডলার আয় করেন। আমাদের প্রবাসীদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে," যোগ করেন গভর্নর।
অনুষ্ঠানে শীর্ষ রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী হিসেবে ১০টি ব্যাংককে ক্রেস্ট দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলো— ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, অগ্রণী ব্যাংজক, জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি, ট্রাস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক।