চট্টগ্রামে গ্যাসের প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন: সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) এক লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন প্রকল্প অনুমোদনের পর, প্রায় সাড়ে তিন বছরে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার ৫০০ মিটার।
বাকি আরও ৩৯ হাজার ৫০০ মিটার স্থাপনের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এরপরেও ধীরগতির কারণে বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত সংশ্লিষ্টরা।
কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রাহকদের বিনামূল্যে মিটার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মিটার বসাতে রাইজার থেকে প্রত্যেক সংযোগের রান্নাঘর পর্যন্ত একটি পাইপলাইন বসাতে হয় বাড়িওয়ালাদের। প্রতিটি চুলার জন্য ৫-৭ হাজার টাকা গ্রাহককেই খরচ করতে হয়।
এছাড়া অনেক গ্রাহকরা মনে করেন, মিটার বসালে ইচ্ছামতো গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন না। এসব কারণে মিটার বসানো যাচ্ছে না।
কেজিডিসিএলের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রিপেইড মিটার বসানোর আবেদন গ্রহণ শুরু করে কেজিডিসিএল। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। মিটার বসানোর কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬০ হাজার ৫০০টি বসেছে।
বাকি গ্রাহকেরা আবেদন করেও মিটার নিচ্ছেন না। মিটার নিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও গ্রাহকদের খুদে বার্তার মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েও সাড়া মিলছে না।
সংস্থাটির উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. নাহিদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কাছে মিটার আছে এবং মিটার বসানোর সক্ষমতাও রয়েছে। কিন্তু গ্রাহকরা মিটার বসাচ্ছেন না।"
"বর্তমানে গ্যাস সংযোগ কোনো কারণে বন্ধ হলেই আর স্মার্ট মিটার বসানো ছাড়া চালু করা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসছে," যোগ করেন তিনি।
প্রকল্প শুরু হয় ২০২১ সালে
'আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প' শিরোনামে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক লাখ মিটার স্থাপনের জন্য প্রকল্প হাতে নেয় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। ২৪১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ দিতেই দুই বছরের বেশি সময় লাগে। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মিটার স্থাপন শুরু হয়। এরপর দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে তা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ে ৫০ কোটি টাকা।
সংস্থাটির নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ, সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত ও গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস করা।
সংশ্লিষ্টরা তথ্যমতে, কন্ট্যাক্টলেস স্মার্ট কার্ডভিত্তিক উন্নত প্রযুক্তির প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যাটারি চালিত। নিয়ন্ত্রক বাল্বের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ করতে পারে মিটারটি। ব্যবহার অনুযায়ীই মূল্য প্রদান করতে হবে। নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
মিটারে রিচার্জকৃত ক্রেডিট শেষ হয়ে গেলেও তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হবে না। স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেওয়া হবে জরুরি ব্যালেন্স। ব্যবহার করা গ্যাস ও মিটার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য মিটারের এলসিডি ডিসপ্লেতে প্রদর্শিত হবে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, কেজিডিসিএলের মোট গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এরমধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে।
চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২ কোটি ঘনফুট। ১ লাখ প্রিপেইড মিটার বসালে মাসে ১৫ লাখ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে আর্থিক সাশ্রয় মাসে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এর আগে, ২০১৫ সালে জাইকার অর্থায়নে ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ হাজার সংযোগে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়।