লস এঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলে বাস্তুহারা কুকুর, গাধা, ঘোড়া
পিটবুল মিক্স প্রজাতির কুকুর ক্যানেলাকে যখন পাসাডেনা হিউম্যান সেন্টারে নিয়ে আসা হয়, তখন সেটির গায়ে ছাই মাখানো ছিল, আগুনের ধ্বংসাবশেষে হাঁটার কারণে পায়ের তলার ছাল পুড়ে গিয়েছিল এবং কুকুরটির ফুসফুস ধোঁয়া ঢুকে গিয়েছিল। একজন ভাল ব্যক্তি কুকুরটিকে অ্যালটাডেনার ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন এবং সেটিকে একটি কম্বলে মুড়িয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
এখনও হাঁটার শক্তি না থাকলেও, শনিবার ক্যানেলার সাথে আবারও তার মালিকের দেখা হয়। সিএনএন কুকুরটিকে উদ্ধারের ঘটনায় প্রতিবেদন করার পর কুকু ও মালিকের এই পুনর্মিলন সম্ভব হয়েছে।
এটি পাসাডেনা হিউম্যান সোসাইটিতে চিকিৎসা নেওয়া ৪০০টিরও বেশি পশুর মধ্যে একটি, যারা দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ডের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
পশু আশ্রয়কেন্দ্র, পশুচিকিৎসক এবং উদ্ধার সংস্থাগুলো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কুকুর, ঘোড়া, গাধা, ছাগল, ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণীকে উদ্ধার এবং সহায়তা প্রদান করেছে।
লস এঞ্জেলেসের দাবানলে অনেক পরিবার নিজেদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর হিউম্যান সোসাইটি এসব প্রাণীদের সাময়িক আশ্রয় দিতে শুরু করে। তবে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে আর এই ভয়াবহ দুর্যোগে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, ৩৯ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে এবং অন্তত ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে।
পাসাডেনা হিউম্যান সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী দিয়া ডু ভারনেট বলেন, "আমরা এখন আগের থেকে আরো অনেক আহত পশুকে আসতে দেখছি। আমরা এমনও দেখতে পাচ্ছি, যারা তাদের পশুদের সাময়িক আশ্রয়ের জন্য এনেছিল, তারা এখন বুঝতে পারছে যে তাদের আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার জায়গা নেই। তাই এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।"
কিছু প্রাণী তাদের দেহে এই ভয়াবহ দাবানলের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। যেমন বাজেভাবে পুড়ে যাওয়া একটি হাস্কি, যার পশম পুড়ে গেছে এবং পায়ের তলা পুড়ে গেছে।
হিউম্যান সোসাইটির প্রধান পশু চিকিৎসক ডা. মারিয়া পিরডেক বলেন, "কেউ ওকে ফেরত নিতে আসেনি।" তিনি জানান, কুকুরটির মধ্যে ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
পিরডেক বলেন, "ও যখন এসেছিল, তখন ওর মাথাই তুলতে পারছিল না। ও সম্পূর্ণ ক্লান্ত ছিল।"
দিয়া ডু ভারনেট বলেন, সংস্থাটি এখন এই দুর্যোগ প্রতিক্রিয়ার নতুন ধাপ– অনুসন্ধান, উদ্ধার এবং পুনরুদ্ধারে প্রবেশ করেছে। পাসাডেনা হিউম্যান সোসাইটি প্রাথমিকভাবে আগুনের কবলে পড়া অঞ্চলগুলোর জীবন্ত প্রাণীদের সাহায্যের জন্য আসা ফোনকলগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
অ্যালটাডেনায় এক ব্যক্তি হিউম্যান সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তার গরু, ভেড়া এবং একটি ষাঁড়ের জন্য পানি সরবরাহের সাহায্য পেতে। আগুনে একটি সেতু ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি ওই পশুগুলোর কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
"আমরা কৌশল নির্ধারণ করছি কীভাবে এই খাদের ওপর দিয়ে এবং পাহাড়ের ওপরে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পৌঁছানো যায়, যাতে প্রাণীগুলো পানিশূন্যতার কারণে মারা না যায়," বলেন ডু ভারনেট।
ডু ভারনেট জানান, চলমান সংকটের মধ্যে সম্প্রদায় এত বেশি অনুদান দিয়েছে যে পাঁচটি বিশাল পূর্ণ হয়ে গেছে।
ঘোড়া এবং গাধার আশ্রয়স্থল
লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছাকাছি বারব্যাংকে লস অ্যাঞ্জেলেস ইকুয়েস্ট্রিয়ান সেন্টার প্রায় ৪০০টি প্রাণীকে আশ্রয় দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ঘোড়া। তবে এর মধ্যে কয়েকটি গাধাও রয়েছে। কিছু প্রাণীকে তাদের মালিকরা বাড়িঘর খালি করার সময় এখানে নিয়ে এসেছেন। আবার কিছু প্রাণীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ধার করেছে। দাবানলের সময় প্রাণীগুলো এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পূর্ব পাশে ইটন ফায়ার এমন একটি অঞ্চলে আঘাত হানে, যেখানে ঘোড়াপ্রেমীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ইকুয়েস্ট্রিয়ান সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার লি অ্যান ক্লেওয়েল বলেন, "এই এলাকার মানুষদের বাড়ির পেছনে ঘোড়া রাখার রীতি রয়েছে। এটি অনেকদিন ধরে ঘোড়ার জন্য পরিচিত একটি এলাকা। এখানেই হলিউডের ওয়েস্টার্ন সিনেমার উত্থান হয়েছিল, কারণ এখানে প্রচুর কাউবয় এবং র্যাঞ্চ (খামারবাড়ি) ছিল।"
ক্লেওয়েল জানান, কিছু উদ্ধার করা ঘোড়াকে নতুন পরিবেশে এসে কিছুটা বিপদগ্রস্ত দেখাচ্ছিল। তবে সামগ্রিকভাবে, "প্রত্যেকেই ধীরে ধীরে একটি রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।"
শনিবার অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক ঘোড়াগুলোকে হাঁটাচলা করানো, খাবার খাওয়ানো এবং আশপাশ পরিষ্কার রাখার কাজে সাহায্য করেন। কেন্দ্রটি আপেল ও গাজরের মতো পশুখাদ্য এবং মানুষের জন্য পিৎজা ও স্যান্ডউইচে পূর্ণ ছিল। পশ্চিমে প্যালিসেডস দাবানল এবং পূর্বে ইটন দাবানলের ধোঁয়া দৃশ্যমান ছিল।
ক্যারি সাইদাহ তার দুই গাধা এবং দুই ঘোড়াকে নিতে এসেছিলেন। বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে তাকে বাধ্য হয়ে নিজের বাড়ি খালি করতে হয়। তখন তিনি প্রাণীগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলেন।
সাইদাহ বলেন, "সেটা ভয়ংকর ছিল। আকাশে আগুনের মতো একটা ব্যাপার।"
তিনি এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটি ঘোড়ার ট্রেলার ধার করে রোজ বোলের কাছাকাছি একটি স্থানে যান, কিন্তু সেখানে জায়গা পূর্ণ ছিল। পরে বারব্যাংকের ইকুয়েস্ট্রিয়ান সেন্টারে ঘোড়া জিপ্পি ও সনির জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়ার পর তিনি গাধা মিডজ ও থেলমাকে নিয়ে যান।
শনিবার সাইদাহ বলেন তিনি আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আরও বলেন, তার প্রাণীদের হয়ত তাদের প্রচুর খাবার ও বিশেষ যত্নের কথা মনে পড়বে।
সাইদাহ বলেন, "এখানে অনেক সাহায্য এবং উদারতার পরিচয় দেওয়া হচ্ছে।"