টিউলিপ সিদ্দিককে কেন এখনো বরখাস্ত করা হলো না
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা বর্তমানের কথিত অভিযোগ, তার অতীতের অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের খবর দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, ডেইলি মেইল, ফিনান্সিয়াল টাইমস, দ্য টেলিগ্রাফ এবং সানডে টাইমসসহ বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ মিডিয়া আউটলেটের নিয়মিত সংবাদ হয়ে উঠেছে।
তার বিরুদ্ধে অন্যতম অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তার খালা) ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া একাধিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন।
টিউলিপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আসার পরে সেগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে গত সোমবার চিঠি লেখেন তিনি।
ম্যাগনাসকে পাঠানো চিঠিতে তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তিনি "কোনো ভুল করেননি।"
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে প্রায় ৮ বছর গোপন কারাগারে বন্দী ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম। ব্যারিস্টার আরমান নামেও পরিচিত তিনি। অভিযোগ রয়েছে, ব্যারিস্টার আরমানকে নিয়ে লন্ডনে টিউলিপকে প্রশ্নের পরই ঢাকায় তার বাড়িতে চলে পুলিশের অভিযান।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে (এফটি) দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার আরমান জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে তাকে নিয়ে টিউলিপকে প্রশ্ন করেন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। এর জেরে আরমানের ঢাকার বাসায় অভিযান চালান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা তার স্ত্রীকে 'মুখ বন্ধ' রাখার হুমকি দেন ওই সময়।
২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর লন্ডনে চ্যানেলের ফোরের এক সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিককে গুম হওয়া ব্যারিস্টার আরমানের অবস্থান জানতে প্রশ্ন করেন। তিনি টিউলিপকে বলেন, একটি ফোন কলেই হয়ত আপনি তার (আরমান) জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারেন।
জবাবে টিউলিপ বলেন, 'আমি একজন ব্রিটিশ এমপি। আমাকে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ হিসেবে উপস্থাপন করা থেকে সতর্ক থাকুন'। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ তিন দিন পর, ২৮ নভেম্বর রাতে প্রচারিত হয়।
ব্যারিস্টার আরমানের অভিযোগ, চ্যানেল ফোর নিউজের ওই ফুটেজটি প্রচারের কয়েক ঘণ্টা আগেই তার বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় সশস্ত্র সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীর বিদেশি যোগাযোগের তথ্য জানতে চায়। তিনি জানান, পরিস্থিতি এমন ছিল যেন তারা কোনো সন্ত্রাসীকে খুঁজছে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতবছর লেবার পার্টির নেতা ও তৎকালীন ট্রান্সপোর্ট সেক্রেটারি লুইস হেইগ এক দশক আগের প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। নভেম্বর মাসে একটি হারানো মোবাইল ফোনের বিষয়ে অপরাধ স্বীকার করায় হেইগকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
তাহলে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে, এক দশক আগের অপরাধের জন্য হেইগকে পদত্যাগে বাধ্য করা হলেও, টিউলিপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন অভিযোগ আসার পরেও তাকে কেন বরখাস্ত করা হচ্ছে না?
এর একটি কারণ হতে পারে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা। টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির পার্টির মধ্যমপন্থি বা "সফট লেফট" শ্রেণির একজন, যিনি ২০১৫ সালে জেরেমি করবিনকে মনোনয়ন দিয়ে তাকে আকস্মিকভাবে লেবার পার্টির নেতৃত্বে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছিলেন।
টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির একজন শক্তিশালী নেতা। তিনি হ্যামস্টেড এবং হাইগেটের এমপি। নির্বাচনের সময় তিনি স্টারমারকে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী স্টারমার প্রয়োজন হলে তার মিত্রদের পদ সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন, তিনি যখনই পেরেছেন তখনই তাদের রক্ষা করে গেছেন এবং সরকারের মধ্যে রেখেছেন।
আরেকটি বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ লেবার পার্টির সহযোগী দল এবং যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। এক লেবার কর্মকর্তা বলছেন, "সিদ্দিকের পরিবার বাংলাদেশের রাজনীতির কেনেডি পরিবার।"
সর্বশেষ কারণ হলো, এখন পর্যন্ত বিরোধী দল স্টারমারের জন্য তার বন্ধুকে সরকারের মধ্যে রাখার বিষয়টি যথেষ্ট কঠিন করে তোলেনি। কনজারভেটিভ নেতা কেমি বাডেনচ শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে সিদ্দিককে বরখাস্ত করার আহ্বান জানান। তবে, তিনি এবং শ্যাডো ট্রেজারি দল এ বিষয়ে খুব ধীরগতিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড টরি নেতা কেমি বাডেনচ এর মতামত পুনর্ব্যক্ত করে কিয়ার স্টারমারের কাছে টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিদ্দিকের জন্য এখন তার দায়িত্ব পালন করা "অসম্ভব", এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
এখন যেহেতু প্রধান বিরোধী দল এই বিষয়ে সচেতন হয়েছে, সম্ভবত টিউলিপ সিদ্দিককে ট্রেজারি মন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হতে পারে।