জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রিকশাচালকের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার চিকিৎসকসহ ৫ জনের জামিন
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রিকশাচালক ইসমাইল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ডেলটা হেলথ কেয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) ঢাকার একটি আদালত তাদের জামিন দেন বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন রামপুরার ডেলটা হেলথ কেয়ার-এর পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
'আদালত চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্মীসহ পাঁচজন সবার জামিন মঞ্জুর করেছেন। আশা করি আগামীকাল তাদের মুক্তি দেওয়া হবে,' তিনি বলেন।
এ পাঁচজন হলেন হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার ডা. সাদী বিন শামস, মার্কেটিং কর্মকর্তা হাসান মিয়া, মেইনটেন্যান্স কর্মী বোরহান উদ্দিন এবং নিরাপত্তা প্রহরী ইসমাইল ও নজিম উদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় রামপুরায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে ডেলটা হেলথ কেয়ারের সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছান রিকশাচালক ইসমাইল। কিন্তু হাসপাতালের ভেতর থেকে তাকে সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি।
এ ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ১৭ জানুয়ারি রাতে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ।
সম্প্রতি হাসপাতালের সিঁড়িতে ইসমাইলের রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তারপরই পুলিশ ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।
এ গ্রেপ্তারের ঘটনায় চিকিৎসক কমিউনিটির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা করেন।
গ্রেপ্তারের পর ডেলটা হেলথ কেয়ারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে হাসপাতালের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
১৮ জানুয়ারি এক প্রেস রিলিজে ১৯ জুলাইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করে তিনি বলেন, 'বিকাল আনুমানিক ৪টা ৩০-এর সময়ে হঠাৎ করে আমাদের হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি শুরু হলে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ডেলটা হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ঝুঁকি নিয়ে উক্ত গুলিবিদ্ধ লোককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসতে চেষ্টা করেন, যার ভিডিও আমাদের রয়েছে।'
ডা. সাইফুল আরও বলেন, 'তখন রাস্তায় গুলিবর্ষণকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ডেলটা হেলথ কেয়ার, রামপুরা লিমিটেড-এর উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করলে তৎক্ষণাৎ ডিউটিরত চিকিৎসকের পাঞ্জাবি ভেদ করে গুলি হাসপাতালের দেওয়ালে লেগে যায়, যার চিহ্ন এখনও বিদ্যমান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অস্ত্র তাক করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মরদেহটি সরিয়ে নেয়।'
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। 'পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা মৃতদেহটি নিয়ে যায়। আমরা থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানালে থানা সেটি গ্রহণ করে নাই।'
'আসল খুনিদের না ধরে এবং হত্যাকারীদের অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়ে ঘটনার ৫ মাস পর নিরীহ মানুষকে আসামি করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাজনক,' বলা হয় বিবৃতিতে।