টিকটকের ভাগ্য: নতুন ভোর না প্রলয়ংকরী ঝড়!
২০১৬। চীনের ইন্টারনেট জগতে নতুন একটি অ্যাপ এল। দোইয়েন। চীনা দোইয়েন শব্দকে অনুবাদ করলে মোটামুটি অর্থ হবে 'ছন্দময় শব্দ-তরঙ্গ'। এই নাম রাখার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বাইটডান্সের উদ্দেশ্য ছিল যেন সহজেই বিনোদনমূলক, গতিতে ভরপুর, সুর ও ছন্দের ব্যঞ্জনায় সমৃদ্ধ, সংক্ষিপ্ত ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশের পাটাতন বা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দোইয়েনকে ব্যবহার করা। মেট্রো থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট পর্যন্ত সব জায়গাই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা হরহামেশাই এ ধরনের ভিডিও গ্রহণ করছে। এক বছরের মধ্যে চীন ও থাইল্যান্ডে এই অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি স্পর্শ করল।
বাংলাদেশে স্বৈরশাসকের দেড় দশকের বেশি সময় ধরে সংবাদমাধ্যমের গলা টিপে ধরা হয়েছিল। পদ্মা সেতুতে কটি স্প্যান দৃশ্যমান হচ্ছে, সে খবর গুরুত্ব পেয়েছে। কিংবা চিত্রনায়িকার সংসার জোড়া লাগার বা ভাঙার খবর শীর্ষ শিরোনাম হয়ে এসেছে। কিন্তু গুম হওয়া পরিবারের দুর্দশা বর্ণনা করা দুষ্কর ছিল। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও এই নিষেধাজ্ঞার লৌহ মুগুরের বাইরে ছিল না। বেতাল বা বেচাল হলেই অবধারিত খুন-গুম, নিদেনপক্ষে মামলা-হামলা। এ জন্য সে সময় হঠাৎ করে 'উগান্ডা' জনপ্রিয় দেশে পরিণত হয়েছিল বঙ্গের সামাজিক মাধ্যমে। 'উগান্ডার' নানা কাহিনি শোনা যেত। স্বদেশের তিক্ত সত্য, পারমাণবিক বালিশ বা কালা বেড়ালের মতো গালগল্পের কথাই সে সময় বঙ্গবাসীরা বলত উগান্ডার নাম করে।
চীনের পরিস্থিতি সে রকম ভয়াবহ নয়। তারপরও দেশটিতে বই প্রকাশনা, খবরের কাগজ, রেডিও এবং টেলিভিশনের মতো প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপানো আছে অনেক নিষেধাজ্ঞা। সে তুলনায় ইন্টারনেটের জগতকে 'বুনো পশ্চিম' অর্থাৎ 'ওয়াইল্ড ওয়েস্টের' সঙ্গে তুলনা করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে স্মার্টফোনের আর্বিভাব তথ্যের জগতে বিপ্লব বইয়ে দেয়। পিসি বা ল্যাপটপ না থাকলেও গোটা চীনে প্রায় প্রতিটি কর্মজীবী পূর্ণবয়সী মানুষের হাতে হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে যায়। এ ঘটনা শুরু হয় ২০১০-এর দশক থেকে। চীনের ইন্টারনেট জগতে ভূকম্পন ঘটে যায়। চীনে ২০১১ সালে আইফোন ৪এস বাজারে ছাড়া হয়েছিল। চীনারা আইফোন কিনতে লম্বা লম্বা সারি ধরেছে। সে বছরই চীনের ভেতর ১১ কোটি স্মার্টফোন বাজারে ছাড়া হয়েছে।
স্মার্টফোন বাড়ার সাথে সাথেই পাল্লা দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা এবং তথ্যের বাজারও বাড়ে। সে সময় ইমিং বলেছিলেন যে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে খবরের কাগজের স্থান হয়তো দখল করবে মোবাইল ফোন। এটিই হয়তো তথ্যের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠবে। মানুষ এবং মোবাইল ফোনের সম্পর্কের কারণে ব্যক্তি পছন্দভিত্তিক তথ্যের চাহিদা বাড়বে। তার এই ভাবনা পরবর্তী সময়ে বাস্তবতার সাথে খাপে খাপে মিলে যায়। চীনভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন জাং আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি বলেছিলেন, মানুষের শরীরের বর্ধিত অংশ হলো সেলফোন।
বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিংয়ের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে নতুন এককালের মুখোমুখি হয়েছেন। কালের এ হাওয়ায় পাল তুলতে হবে। বাইটড্যান্স ইমিংয়ের নেতৃত্বে দোইয়েনসহ আরও কয়েকটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার তৈরি করে।
বাং ইমিং খুব ছোট বয়স থেকেই পড়ার অভ্যাস তৈরি করেছিলেন। খুব কচি বয়স থেকেই দুঁদে পড়ুয়া বনে যান তিনি। পরবর্তীকালে বলেন, সে বয়সে যদি উইকিপিডিয়া বা এ জাতীয় পাঠ্যবস্তু থাকত, আজ তিনি যতটা চৌকস হয়েছেন, তার থেকেও চৌকসতর হয়ে উঠতে পারতেন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তার ফলাফল ধারাবাহিকভাবে ভালো ছিল। কিন্তু তাকে উল্লেখযোগ্য বলা যাবে না। শেষ বর্ষে সার্কিট বোর্ড অটোমেশন সফটওয়্যার তৈরি করে একটি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান জয় করেছিলেন। তারপরও ইমিংয়ের সহপাঠী বা শিক্ষকদের কেউ তখনো ভাবেননি, তার মধ্যে ঘুমিয়ে আছে বিশাল এক প্রতিভা। উদ্যোক্তা। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের ডিজিটাল জীবনে আধিপত্য বিস্তার করবেন পরবর্তীকালে।
স্বীয় কোম্পানির নাম রাখতে চীনের প্রচলিত ধারা মানেননি ইমিং। প্রথমেই ইংরেজি নাম বেছে নেন। এ নাম রাখতে গিয়ে মগজের ঝড় বইয়ে দিতে হয়েছে তাকে। ভাবনার 'মরু দুস্তর পারাবার' পার হতে হয়েছে। স্টিভ জবসের বিখ্যাত উক্তি, প্রযুক্তি এককভাবে পর্যাপ্ত নয়। প্রযুক্তির সাথে উদার শিল্পকলা, মানবিকতার শুভ মিলন ঘটলে তার পরিণামে আমাদের হৃদয়ে সংগীতের সুর বেজে ওঠে। এ বক্তব্য ইমিংকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। কম্পিউটারে তথ্যের একক হলো 'বাইট'। আর 'ডান্স' এখানে উদার শিল্পকলার প্রতিনিধিত্ব করছে। দুইয়ে মিলেমিশে হলো 'বাইটডান্স'। এই নামটির আক্ষরিক অনুবাদ করা হয় চীনা ভাষায়। তবে ভুল বোঝার, কোম্পানিটিকে নৃত্যশিল্পের সাথে জড়িত বণিক সংস্থা মনে করার অবকাশ সেখানে হয়তো ছিল। একইভাবে ইংরেজি নামটাও খানিকটা অদ্ভুত গোছের মনে হতে পারে।
চীনের বাজারে আলোড়ন তোলার মাত্র ১৮ মাস বাদে টিকটক নাম দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে দোইয়েনকে ছাড়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে ছাড়ার পর চীনে বেদম জনপ্রিয় দোইয়েনের কক্ষপথেই চলতে শুরু করে টিকটক। দোইয়েনের মতো প্রথম মনে করা হয়েছিল, অ্যাপের সাগরে টিকটক বড়জোর আরেকটি অ্যাপ মাত্র। কয়েক দিন গেলেই আগের অনেক অ্যাপের মতোই এটি মিলিয়ে যাবে। ঘটল ভাবনাতীত কা-কারখানা। টিকটক নামের অ্যাপটির জনপ্রিয়তা আতশবাজির মতোই শোঁ শোঁ করে গগনস্পর্শী হয়ে উঠতে থাকল। সকল প্রত্যাশাকে অতিক্রম করে বিশ্বজয়ী হয়ে উঠতে শুরু করল টিকটক। সংগীত ব্যবহারের অপার সুযোগ এবং সমসাময়িক অনেক অ্যাপের তুলনায় শক্তিশালী অ্যালগরিদম। এই দুইয়ের রসায়নই টিকটকের সফলতার চাবি। প্রযুক্তি জগতের রথী-মহারথীদের অনেকেই মনে করেন এমনটি। টিকটকে ঠোঁট মেলাবার জন্য বিপুল পরিমাণ সংগীত, ফিল্টার এবং চলচ্চিত্রের খুদে খুদে অংশ বা ক্লিপ সহজেই হাতড়াতে পারেন ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে ব্যবহারকারীদের মনের মতো পছন্দনীয় বিষয়বস্তু তাদের সামনে তুলে ধরা পোড় খাওয়া বিক্রেতার মতো ঘাগু অ্যালগরিদমের শক্তিতে।
অনেক ব্যবহারকারীই টিকটক ব্যবহারের সময়ের সিংহভাগ অংশই 'ফর ইউ পেজে' বিচরণ করে কাটান। টিকটকের বিষয় বা কনটেন্ট এখানেই তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। এর আগে তারা যেসব বিষয় চেখে বা নেড়েচেড়ে দেখেছেন, তাকেই ভিত্তি করে টিকটকের অ্যালগরিদম। অ্যাপটির অ্যালগরিদম ধরে নেয়, কী ধরনের বিষয় তাদের পছন্দ হতে পারে; তার সামনের সে ধরনের জিনিসই তুলে ধরা হতে থাকে। এভাবেই যেকোনো বিষয় ভাইরালও হতে পারে। নির্মাতা বা ক্রিয়েটরের অনুগামী সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, তা গুরুত্বের হয়ে ওঠে না।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই অ্যাপের মূল কোম্পানি বাইটডান্সের দৈনিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি স্পর্শ করে। হালের এক হিসাব থেকে জানা গেছে, বিশ্বে ২.০৫ বিলিয়ন বা ২০৫ কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করছে। চলতি বছরে শেষ দিকে এ সংখ্যা বেড়ে ২.১৪ কোটি বা ২১৪ কোটি হবে। ইন্টারনেটের এ পাটাতনে মাসে সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১.৬৯ বিলিয়ন বা ১৬৯ কোটি। এসব ব্যবহারকারী গড়ে দৈনিক ৫৮ মিনিট সময় এ অ্যাপের পেছনে খরচ করে। টিকটকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, আমেরিকায় এ অ্যাপের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে টিকটকের সক্রিয় মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল সাড়ে পাঁচ কোটি।
টিকটক (চীনা সংস্করণ হিসাবসহ) দুনিয়ার অন্যতম সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত সামাজিক নেটওয়ার্ক হয়ে উঠেছে। এবারে দুনিয়া মাতিয়ে তোলা অ্যাপটির দিকে নজর পড়ল রাজনীতিবিদদের। তাদের ভাবনায় কিলবিল করে উঠল, চীনা অ্যাপ আধুনিক জীবনের বিরাট অংশকে এত দ্রুত মাতিয়ে তুলল, কীভাবে এটা সম্ভব হলো? আর এ ঘটনাকে কেমনভাবে নিতে হবে?
টিকটক ব্যবহারকারীদের স্পর্শকাতর ডেটা হাতিয়ে নিচ্ছে। চৈনিক সরকার এসব ডেটাকে গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহার করতে পারবে। ইন্ডিয়া এবং আমেরিকার তরফ থেকে অভিযোগ উঠল। অভিযোগকে সমর্থন করার মতো জোরদার যুক্তি ছিল না। এ অভিযোগে আরও বলা হলো, চীনের প্রায় প্রতিটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে একটি অভ্যন্তরীণ 'চক্র' থাকে। এ 'চক্র'কে বেইজিংয়ের কমিউনিস্ট পার্টির কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এদের মধ্যে অনেককেই গোপন তথ্য জোগাড় করতে বা গোয়েন্দাগিরিতে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খড়গ নেমে আসে ভারতে। দেশটির এক আদালত টিকটককে অ্যাপ স্টোর থেকে সরানোর আদেশ দেওয়ার পরই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সে সময় দাবি করা হয়, পর্নোগ্রাফি বিস্তারে টিকটককে ব্যবহার করা হচ্ছে। আপিল করার পর নিম্ন আদালতের রায়টি বাতিল হয়ে যায়।
টিকটককের ওপর ২০২০ সালের জুনে আবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। দিল্লি সরকার দাবি করে, অ্যাপটি গোপনে ব্যবহারকারীদের ডেটা হাতিয়ে নিচ্ছে।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের তথ্য কমিশনারের দপ্তর এবং অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো টিকটকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়েছে। তাদের অনুসন্ধানের জাল খালি ফিরে এসেছে। ধরা পড়েনি তারা যা চাচ্ছিলেন, তেমন কোনো রুই-কাতলা তো দূরে থাক, তিত পুঁটিও।
ডেটা ব্যাপকভাবেই সংগ্রহ করে টিকটক। এসব ডেটা দিয়ে কী করে বাইটডান্স, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী অনেক কিছুই বলা হয়। টিকটকের ব্যক্তিগত নীতিমালা থেকে জানা যায়, কোন কোন ভিডিও দেখা হয় এবং মন্তব্য করা হয়। অঞ্চলসংক্রান্ত ডেটা। ফোন মডেল এবং অপারেটিং সিস্টেম। টাইপ করার সময়কার ছন্দ, কী গতিতে টাইপ করে, একটি কি বা (অক্ষরের) চাবি চাপার পর আরেকটা চাপতে কতটা দেরি করে, কতটা চাপ দিয়ে টাইপ করে, টাইপকালে কতটা ভুল করে এবং শুদ্ধ করে- সব মিলিয়ে কিস্ট্রোক রিদম। আঙুলের ছাপ নিয়ে যেমন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়, একইভাবে টাইপের ছন্দ দিয়ে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব। এ ছাড়া ক্লিপবোর্ডে ব্যবহারকারীরা কী কী কপি পেস্ট করছে, তা-ও জানতে পারে অ্যাপটি।
এটি নতুন বা অভূতপূর্ব কিছু নয়। রেডিট, লিংকডইন এমনকি বিবিসি নিউজের মতো অ্যাপসহ ভূরি ভূরি অ্যাপ এমন ডেটা জোগাড় করে। কিন্তু জোগাড় করা ডেটা বদ কাজে লাগানোর কোনো নজির পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ফেসবুক বা ডেটাখাদক অন্যান্য যেসব সামাজিক নেটওয়ার্ক আছে, তাদের ডেটা সংগ্রহের ধারার সাথে টিকটকের তুলনা চলে। বাংলা প্রবাদের সূত্রে বলা যায়, সব মাছই যে কর্ম করে, তার জন্য এককভাবে একটি মাছকেই দায়ী করা হচ্ছে।
ডেটা আহরণ এবং ডেটা প্রবাহ নিয়ে নজিরবিহীন স্বচ্ছতার কথা বলেছিল টিকটক। দুই বছর আগে বলেছিল, টিকটকের অ্যালগরিদম চলে যে কোডের ভিত্তিতে, তা মার্কিন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে দেওয়া হবে। শিল্পের যে শাখায় ডেটা এবং কোডকে কড়া নজরাধীন রাখা হয়, সেখানে এমন ঘোষণাকে উল্লেখযোগ্যই বলতে হবে। এদিকে টিকটকের সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য মার্কিনভিত্তিক প্রতিযোগীদের অন্যতম হলো ইউটিউব শর্টস, ইনস্টাগ্রাম রিলস, থ্রিলার বা বাইট। এসব মার্কিন প্রতিযোগীরা টিকটকের মতো এমন ঘোষণা দেয়নি।
বিবিসির ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালের দৈনিক গার্ডিয়ানের এক খবরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল যে তিয়ানমেন চত্বরের ফুটেজ বা তিব্বতের স্বাধীনতার দাবির মতো রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়বস্তুকে বাধা নিষেধের আওতায় ফেলে টিকটক। একই প্রতিবেদনে বিবিসি ইন্টারসেপ্টের বরাতও দিয়েছিল। তাতে বলা হয়, 'কুৎসিত' বা 'দুর্বল' মনে করা হলে মডারেটররা সেগুলোকে অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে সরিয়ে দিতে উৎসাহিত করে। এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, ভিডিও অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন চীনের মডারেটররা।
টিকটক এখনো আমেরিকায় নিষিদ্ধ হয়ে আছে। জানুয়ারির ১৯ তারিখ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। মার্কিন সরকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার হোতারা মনে করেন যে টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটডান্স হয়তো সংগৃহীত ডেটার অপব্যবহার করতে পারে। কিংবা চাইলে প্রচারণাও চালাতে পারে। অপপ্রচার চালিয়ে মাতামাতি তৈরি করতে পারে।
এই উদ্বেগকে কেন্দ্র করে বাইটডান্সকে টিকটক অ-চৈনিক মালিকের কাছে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মধ্যে বিক্রি করতে হবে বলে আমেরিকা আইন জারি করে। তবে এই বিক্রির কাজ ওই সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারেনি বাইটডান্স। ফলে আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞার কালো পর্দা নেমে আসে টিকটকের ওপর। অ্যাপ স্টোরগুলো থেকে টিকটক সরিয়ে নেওয়া হয়। আমেরিকার ব্যবহারকারীদের টিকটক ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
'শেষ হইয়াও হইল না শেষের' মতো কীর্তিকলাপ এখানেও ঘটে। চলতি মাসের ২০ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার কুরসিতে বসেই নির্বাহী আদেশ জারি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টিকটক নিয়ে এ আদেশে মার্কিন ক্রেতা পাওয়ার জন্য আরও ৭৫ দিন বাড়তি সময় দেওয়া হয়। ফলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার হাত থেকে আপাতত প্রাণে রক্ষা পেয়েছে টিকটক।
এরই মধ্যে অনেক মার্কিন ব্যবহারকারী টিকটকের বিকল্প রেডনোট নামেও পরিচিত জিয়াওহংশুর দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন।
টিকটকের ভাগ্যাকাশে শেষ পর্যন্ত কি ঘন মেঘের ঘনঘটা কেটে নতুন ভোরের দেখা মিলবে? নাকি প্রলয়ংকরী কালবৈশাখীর থাবায় সোনার ডিম পাড়া সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে?-নিশ্চিত উত্তরের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আমাদের।