কাট্টলীকে কেন্দ্রীয় পয়ঃনিষ্কাশন সেবায় যুক্ত করতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ২,৭৯৭ কোটি টাকার প্রকল্প
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/09/p_3-ctgs-kattali-to-get-sewerage-upgrade-by-2029.jpg)
বন্দরনগরীর কাট্টলী এলাকার বাসিন্দাদের কেন্দ্রীয় পয়ঃনিষ্কাশন আওতায় আনতে হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। এ প্রকল্পের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে তিন লাখ এবং ২০৭০ সালের মধ্যে ১৫ লাখ মানুষকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা।
কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে শহরকে ছয়টি জোনে বিভক্ত করা হয়েছিল। 'উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট স্যানিটেশন প্রকল্প' এই পরিকল্পনার তৃতীয় উদ্যোগ।
প্রকল্পটি গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্পটির প্রক্ষেপণ নথি অনুসারে, নগরীর হালিশহরে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জমিতে দৈনিক ৫০ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। প্ল্যান্ট নেটওয়ার্ক সেবাগ্রহীতাদের যুক্ত করতে ৯৮ কিলোমিটার স্যুয়ার লাইন ও ৮ হাজার ১০০টি গৃহ-সংযোগ স্থাপনের কথা রয়েছে।
এছাড়া অন-সাইট স্যানিটেশন ও ফিক্যাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মহানগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্টের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন, কমিউন্যাল সেপটিক ট্যাংক, পাবলিক টয়লেট ও ডিসেন্ট্রালাইজড ওয়েস্টওয়াটার সিস্টেম নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজ করা হবে, যার সংখ্যা মোট ৭৯৭টি।
প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ফ্রেঞ্চ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি) ১ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেবে। বাকি অর্থের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অনুদান ৩৬২ কোটি টাকা ও সরকারি ঋণ ৫৪৩ কোটি টাকা, আর ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকা সংস্থানের কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'প্রকল্পটির মূল অবকাঠামো হালিশহরে নিজস্ব জমিতে নির্মাণ করা হবে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। ডিজাইন ও ড্রইংয়ের পরামর্শক সংস্থা নিয়োগ করে এক বছর মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।'
মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন
চট্টগ্রাম ওয়াসার সূত্রমতে, নগরীতে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৪০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য উৎপন্ন হয়। নালা-খাল গড়িয়ে এসব বর্জ্য যায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে। জোয়ার-ভাটার টানে এর শেষ ঠিকানা হয় বঙ্গোপসাগর।
বর্তমানে দৈনিক ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্লাজ (মানব বর্জ্য) জমা হয় সেপটিক ট্যাংকে। এর মধ্যে ১৫ ঘনমিটার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এবং ২০ ঘনমিটার এনজিও ডিএসকের ব্যবস্থাপনায় পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি বর্জ্য নদী ও সাগরে গিয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় চট্টগ্রাম শহরকে ছয়টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করা হয়। মোট ৮৯ লাখ মানুষকে সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যানিটেশন ও ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় চট্টগ্রাম শহরকে ছয়টি ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। মোট ৮৯ লাখ মানুষকে সেবার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে ছয়টি ক্যাচমেন্টকে পাঁচটি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। চারটি অঞ্চলকে ঘিরে তিনটি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। বাকি দুটি ক্যাচমেন্টও পাইপলাইনে রয়েছে।
মাস্টারপ্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ক্যাচমেন্টের কাজ শুরু হয়। নগরীর হালিশহরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১৬৩ একর জমিতে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ও ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ এ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার এটিই প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প।
দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে পারেনি ওয়াসা। বর্তমানে মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর ব্যয় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।
দ্বিতীয় স্যুয়ারেজ প্রকল্প, অর্থাৎ 'চট্টগ্রাম পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প (ক্যাচমেন্ট-২ ও ৪)' গত বছরের ২৫ নভেম্বর অনুমোদন হয়েছে। নগরীর কালুরঘাট ও বাকলিয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের কেন্দ্রীয় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে ৫ হাজার ১৫২.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে ৪ লাখ ও ২০৭০ সালের মধ্যে আরও বেশি মানুষ প্রকল্পটির সেবার আওতায় আসবে।
প্রকল্পটির অধীনে কালুরঘাটের হামিদচর এলাকায় দৈনিক ৬০ হাজার ঘনমিটার সক্ষমতার একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, ১১ কিলোমিটার প্রধান স্যুয়ার লাইন, ৭০ কিলোমিটার শাখা স্যুয়ার লাইন, ৭০ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন, ৯৩২টি ম্যানহোল এবং ১৪ হাজার গৃহসংযোগ ও ১৪ হাজার ক্যাচপিট স্থাপন করা হবে।
৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা ফতেহাবাদ ক্যাচমেন্টে (এসটিপি-৩) প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডও (ইডিসিএফ) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে। এ প্রকল্পের অধীনে দৈনিক ৬০ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এর আওতাভুক্ত হবে নগরী ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ।
৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা ক্যাচমেন্ট (এসটিপি-৬) প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে করতে আগ্রহী মারুবিনি কর্পোরেশন। প্রকল্পটির আওতায় দৈনিক ৫০ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য পরিশোধন করা যাবে। এর আওতাভুক্ত হবে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মানুষ।
প্রকল্প দুটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশন ও অন্যান্য সরকারি কমিটির পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, 'চট্টগ্রাম শহরের মানুষের সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীকে বাঁচাতে হলে সব এলাকাকে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনায় আওতায় আনতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে।'