বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে বগুড়ার শুটকি ব্যবসায়ীরা
করোনার পাশাপাশি বন্যা, বৃষ্টি আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে উত্তরাঞ্চলে শুটকি (শুকনো) মাছ ব্যবসায়ীরা এ বছর বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি মুখে পড়েছেন।
উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নিলাফামারীর সৈয়দপুরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শুটকি মাছের আড়ত ও নাটোরের চলন বিলসহ অন্যান্য এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুকনা মাছ ব্যবসায়ীদের আগে কখনোই এ রকম লোকসান গুনতে হয়নি।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার নিঙ্গন এলাকার শুটকি মাছ উৎপাদনকারী মো: সানোয়ার হোসেন জানান, গত মৌসুমে তিনি সৈয়দপুরে প্রায় ৭ লাখ টাকার শুটকি মাছ বিক্রি করেছেন। অথচ এ বছর তার কোনো বিক্রি নেই। আর এ কারণে লোকসান হয়েছে কমপক্ষে এক লাখ টাকা।
'প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শুটকি বেচা-কেনার যে প্রস্তুতি থাকে, এ বছর সে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি মূলত করোনাভাইরাস ও আম্পানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। আর এ অবস্থায় নিঙ্গন এলাকার সব ব্যবসায়ীকেই গুনতে হচ্ছে লোকসান,' বলেন মো: সানোয়ার হোসেন।
ভারতে চলনবিল এলাকার পুঁটি মাছের শুটকির চাহিদা সব সময়ই বেশি, কিন্তু এবার পুঁটি মাছের শুটকি তৈরি শুরু হয়েছে অনেক পরে; সে কারণে রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার আশংকা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।
অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জের তারাশ উপজেলার মহিষ লুটি বাজারে অনেক দিন ধরেই শুটকি মাছের ব্যবসা করেন মো: নান্নু হোসেন। বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়ক সংলগ্ন এলাকায় শুটকিসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় মাছের এই বাজারে গত ১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে ব্যবসা করছেন অন্তত ১২ ব্যবসায়ী।
আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় এ বছর মহিষ লুটি বাজারে শুটকি মাছ ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনা করছেন খুবই কম। 'এ বাজারের এমন কোনো শুটকি মাছ বিক্রেতা নেই যার লোকসান হয়নি; আমার লোকসান হয়েছে ২ লাখ টাকা,' বলেন মো: নান্নু হোসেন।
সৈয়দপুরে শুটকি মাছ আড়তে প্রায় ৩৭ বছর ব্যবসা করছেন মো: রাসেদুল আলম মামুন। তিনি জানান, এ আড়তে ব্যবসা করেন ৬০ জন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা। এ ছাড়া ৫০ জন ফরিয়া আর ১২ জন আড়তদার বহু বছর ধরেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এ বছর সব ব্যবসায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছেন মূলত করোনাভাইরাস, বন্যা, বৃষ্টি আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে।
মো: রাসেদুল আলম মামুন জানান, করনোর কারণে অনেকের শুটকি মাছ এবার গুদামেই নষ্ট হয়েছে। 'এ বছর শুটকি মাছের ব্যবসায় যে মন্দা চলছে, তা আমার ৩৭ বছরের ব্যবসা জীবনে দেখিনি,' বলেন তিনি।
সৈয়দপুর শুকনো মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনাভাইরাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এ বছর আড়তের ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ৬ কোটি টাকা।
'মোট ক্ষতির ৪০ শতাংশ হয়েছে করোনার কারণে, আর বাকি ৬০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বন্যা, বৃষ্টি আর আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে,' বলেন শেখ মো: দেলোয়ার হোসেন। তিনি দাবি করেন, তার ৩৩ বছরের ব্যবসাজীবনে শুটকি মাছের ব্যবসায় এমন মন্দাভাব আর কখনো দেখেননি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর এ বাজারে শুটকি মাছ আসে চলনবিল ও সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকাসহ খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা এবং উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের নানা জেলা থেকে। কক্সবাজার থেকেও শুটকি আসে এ আড়তে, জানালেন শেখ মো: দেলোয়ার হোসেন।
করোনাভাইরাস বাস্তবতায় সৈয়দপুরে শুটকি মাছের আড়তে যেসব কর্মচারী কাজ করতেন তাদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও কোনো প্রণোদনা পাননি ব্যবসায়ীরা।
'করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখনো সরকারি প্রণোদনা সহায়তার আওতায় আসেননি; তবে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে,' বলেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ।