চলতি সপ্তাহান্তে স্বাক্ষরিত হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি
দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৫টি দেশ চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে। বিশ্বের এক- তৃতীয়াংশ পণ্য উৎপাদনকারী এ অঞ্চলের অর্থনীতিগুলোর সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করা নিয়ে বেইজিংয়ের এক দশকব্যাপী চেষ্টা যার মধ্য দিয়ে সাফল্যের মুখ দেখবে।
রিজিওনাল কম্প্রেহেন্সিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ' শীর্ষক চুক্তিটি সংক্ষেপে আরসিইপি নামেই পরিচিত। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া-সহ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিগুলো এ সমঝোতায় অংশ নিচ্ছে।
চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের মধ্যে আন্তঃবাণিজ্যে কর হ্রাস, কমন রুল অব অরিজিনের মাধ্যমে সরবরাহ চক্র শক্তিশালী করার পাশাপাশি থাকছে ই-কমার্স আইন সংক্রান্ত নতুন বিধিমালা। আরসিইপি'তে সংযুক্ত কিছু শর্তের কারণে; বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
ইতোপূর্বে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে করা ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই নতুন করে মুক্ত-বাণিজ্যের কাঠামো তৈরি হওয়ার পর সেখানে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বাজার প্রতিকূলতা মোকাবিলা করবে, তা বলাই বাহুল্য। গতবছর ভারতও আরসিইপি চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতকে ছাড়াই চলতি সপ্তাহের শেষে ভিয়েতনামে ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনে চুক্তির ঘোষণা দেবে বাকি ১৫টি দেশ। মালয়েশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী আজমিন আলী জানান, আগামী রোববার চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এসময় তিনি আরসিইপি স্বাক্ষরকে 'গত আট বছরের কঠোর দর কষাকষির আলোচনা এবং রক্তজল করা পরিশ্রমের ফসল' বলে উল্লেখ করেন।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ শন রোয়াচে বলেন, 'আরসিইপি যাতে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে চীন (যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে) এক কূটনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। টিপিপি'র তুলনায় আরসিইপি কিছুটা সংক্ষিপ্ত হলেও, এর পরিসর বেশ বড়, কারণ; অনেক দেশের অর্থনীতি এবং পণ্য মুক্ত-বাণিজ্যের আওতায় আসছে। সংরক্ষণবাদি বাণিজ্যের এই যুগে যা এক বিরল দৃষ্টান্ত।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তির প্রভাব:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রদত্ত হিসাবে, আরসিইপি অংশীদার ১৫ দেশের মোট জনসংখ্যা ২২০ কোটি। সম্মিলিত জিডিপি ২৬ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার।
চুক্তির প্রভাব এই অঞ্চলের বাইরে সারা বিশ্বেই অনুভূত হবে। বিশেষ করে, টিপিপি নিয়ে ট্রাম্পের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এখন প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিজ অর্থনৈতিক প্রভাবের আওতায় আনার সুযোগ পেয়েছে চীন। চীনের প্রভাব হ্রাসে এই অঞ্চলে মার্কিন পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য নীতির বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবেই যা পরিচিত পাবে।
নির্বাচনের ফল নিয়ে নিয়ামক সংস্থার সনদ পেলে দায়িত্বভার গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে এখন নতুন চ্যালেঞ্জটির মোকাবিলা করতে হবে।
আরসিইপি আঞ্চলিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে চীনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে কিনা- তা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের উপর অনেকাংশে নির্ভর করছে, বলে জানান উইলিয়াম রেইন্সচ। তিনি ক্লিনটন প্রশাসনে বাণিজ্য বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন।
রেইন্সচ মনে করেন, ''যুক্তরাষ্ট্র যদি এশীয় দেশগুলোকে অবহেলা করে বা তাদের বিরক্ত করা অব্যাহত রাখে- তাহলে আদতে চীনের দল ভারি হবে। কিন্তু, বাইডেন প্রশাসন যদি যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি ও প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি বাস্তবায়নযোগ্য ফলপ্রসূ কৌশল গ্রহণ করে, তাহলেই জয়ী হবে ওয়াশিংটন।''
- সূত্র: ব্লুমবার্গ