চট্টগ্রামের জয়রথ থামিয়ে ঢাকার হুঙ্কার
ম্যাচের শেষ ডেলিভারিটি করলেন বেক্সিমকো ঢাকার মুক্তার আলী। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যান রাকিবুল হাসান চেষ্টা চালিয়েও ব্যাটে-বলে করতে পারলেন না। বল গিয়ে জমা হলো ঢাকার অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে। যেন বল নয়, স্বস্তির পরশ মাখা কোনো জাদুর কাঠি হাতে পেলেন মুশফিক। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত টেনে হুঙ্কার ছেড়ে ঢাকার অধিনায়ক যেন বলে উঠলেন, 'আর হার নয়, এবার শুধুই জয়।'
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের জয়রথে লাগাম টেনেছে বেক্সিমকো ঢাকা। ম্যাচটি ৭ রানে জিতেছে মুশফিকুর রহিমের দল। টানা চার ম্যাচ জেতার পর হারের স্বাদ নিতে হলো মোহাম্মদ মিঠুনের দলকে। অন্যদিকে টানা তিন ম্যাচে হারার পর টানা তিন জয় তুলে নিলো ঢাকা।
এই ম্যাচে জিতলে প্রথম দল হিসেবে শেষ চার নিশ্চিত হতো চট্টগ্রামের। কিন্তু এমন সময়ে এসে খেই হারালো লিটন-সৌম্যদের দল। অন্যদিকে টানা তিন জয়ে শেষ চারের লড়াইয়ে ভালোভাবেই টিকে রইলো ঢাকা। বাকি দুই ম্যাচ দিয়ে প্লে অফের টিকেট কাটার সুযোগ পাচ্ছে দলটি।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বেক্সিমকো ঢাকা। ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিমের ৭৩ রানের দারুণ ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৪৫ রান তোলে ঢাকা। জবাবে লিটন দাস, মাহমুদুল হাসান জয়, মোহাম্মদ মিঠুনদের মাঝারি মানের ইনিংস যথেষ্ট হয়নি জয়ের জন্য। আগের চার ম্যাচেই জেতা চট্টগ্রামের ইনিংস শেষ হয় ১৩৮ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে এদিন আর দাপুটে শুরু করতে পারেনি টুর্নামেন্টে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। দলীয় ১ রানেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা বইয়ে দেওয়া লিটন দাস অবশ্য চেনা ছন্দে খেলে গেছেন। তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য মাহমুদুল হাসান জয়। ২৬ রান করে আউট হন তিনি।
এরপর অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন। এই জুটি থেকে ৪৮ রান পায় চট্টগ্রাম। ৩৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৭ রান করে লিটন আউট হলে বিপদে পড়ে চট্টগ্রাম। ২১ রান করা মিঠুনের বিদায়ে বিপদ আরও বাড়ে দলটির। উইকেট হারানোর চাপ সামলাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় রান রেট বাড়তে থাকে চট্টগ্রামের।
দলের বিপদের সময় ১০ রান করেই থামেন শামসুর রহমান শুভ। রান আউট হওয়া জিয়াউর রহমান দলকে কোনো সাহায্যই করতে পারেননি। নাহিদুলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১৩ রান করে আউট হলে হারের শঙ্কা জেকে ধরে চট্টগ্রামকে। শেষ ওভারে ১৬ রানের দরকার ছিল দলটির। কিন্তু বোলারদের ব্যাটে চড়ে এই রান তুলতে পারেনি চট্টগ্রাম। ঢাকার মুক্তার আলী ৩টি এবং রুবেল হোসেন ও রবিউল ইসলাম রবি ২টি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিং করা বেক্সিমকো ঢাকার শুরুটা ভালো হয়নি। উদ্বোধনী জুটিতে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ঢাকা এদিও একটি পরিবর্তন এনেছে। আগের ম্যাচে নাঈম শেখের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন স্পিনার নাঈম হাসান। এই ম্যাচে নাঈমকে সরিয়ে সাব্বির রহমানকে নামায় দলটি। তবু লাভ হয়নি, ভাগ্য বদলায়নি ঢাকার।
দলীয় ১৩ রানেই বিদায় নেন নাঈম শেখ। এক বল পর তানজিদ হাসান তামিমকে সাজঘরে ফেরান চট্টগ্রামের তরুণ বাঁহাতি স্পিনার রাকিবুল হাসান। কিছুক্ষণ পর ঢাকার বিপদ আরও বাড়ান যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের এই সদস্য। ৭ রান করা সাব্বির রহমানকে ফিরিয়ে ঢাকার ইনিংস এলোমেলো করে দেন তিনি।
যদিও দলকে শুরুর চাপ বুঝতে দেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলী রাব্বি। চতুর্থ উইকেটে ৮৬ রান যোগ করেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ইয়াসির ৩৪ রান করে ফিরলেও নেতার মতো শেষ পর্যন্ত খেলে গেছেন মুশফিক। অভিজ্ঞ ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৫০ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন। চট্টগ্রামের শরিফুল, নাহিদুল, রাকিবুল ও মুস্তাফিজ একটি করে উইকেট পান।