স্ক্র্যাপের জন্য পুরোনো জাহাজ ক্রয়ে বিশ্বে সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছে বাংলাদেশ
স্ক্র্যাপ জাহাজের দামে বিশ্বে শীর্ষস্থান দখল করে আছে বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে পুনঃব্যবহারযোগ্য স্ক্র্যাপ বা পুরোনো লোহা ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গত নভেম্বর থেকে স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে স্ক্র্যাপের চাহিদা।
জাহাজভাঙা শিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, স্থানীয় বাজারে ইস্পাত খাতে কাঁচামাল হিসেবে স্ক্র্যাপের বিপুল চাহিদা মেটাতে তাদের বেশি দাম দিয়ে পুরোনো স্ক্র্যাপ জাহাজ কিনতে হচ্ছে। ফলে স্ক্র্যাপ জাহাজ ক্রেতার তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষেস্থানে রয়েছে।
গত ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত জিএমএস এর সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী , বিশ্বের পুরনো জাহাজের সর্ববৃহৎ ক্রেতা হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে কন্টেইনারবাহী জাহাজগুলোর দাম প্রতি এলডিটি (টনপ্রতি) ৪০০ ডলার, তেলবাহী ট্যাংকার ৩৯০ ডলার এবং খোলা পণ্যবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে ৩৮০ ডলার ।
অথচ জুনে দাম ছিল প্রতি এলডিটি কন্টেইনারবাহী জাহাজের জন্য ৩১০ ডলার, তেলবাহী ট্যাংকারে ৩০০ ডলার এবং খোলা পণ্যবাহী জাহাজের জন্য ২৯০ ডলার।
বর্তমানে ভারতে কন্টেইনারবাহী পুরোনো জাহাজের দাম প্রতি এলডিটি ৩৬০ ডলার , তেলবাহী জাহাজ ৩৭০ ডলার ও খোলা পণ্যবাহী (বাল্ক ক্যারিয়ার) জাহাজ ৩৬০ ডলার।
পাকিস্তানে কন্টেইনারবাহী, তেলবাহী ও খোলা পণ্যবাহী জাহাজের দাম যথাক্রমে প্রতি এলডিটি ৩৯০, ৩৮০ ও ৩৭০ ডলার ।
তুরস্কে কন্টেইনারবাহী, তেলবাহী ও খোলা পণ্যবাহী (বাল্ক ক্যারিয়ার) জাহাজের দাম যথাক্রমে প্রতি এলডিটি ২৪০, ২৩০ ও ২২০ ডলার।
বিশ্বে জাহাজ রিসাইক্লিং করার শতকরা ৯৫ ভাগ সুবিধা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত চীন ও তুরস্কে রয়েছে। তবে ২০১৯ সাল থেকে রিসাইক্লিং করার জন্য জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন।
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে সমস্ত শিপব্রেকিং ইয়ার্ড স্ক্র্যাপ জাহাজ শূন্য। বর্তমানে দেশে নির্মাণ শিল্পের ভরা মৌসুম চলছে। ফলে স্থানীয় বাজারে ইস্পাতের চাহিদাও ব্যাপক।
জিএমএসের সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকে যদি বাংলাদেশের সাথে প্রতিযোগিতা করতে হয়, তবে এ বছরের শেষে ও আগামী বছরের শুরুর দিকে তাদের দাম সমন্বয় করতে হবে।
পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ২০১৯ সালে আগে ভারত ও পাকিস্তানের মতো অন্যান্য প্রতিযোগি দেশের তুলনায় কম জাহাজ আমদানী করেছে।
এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এই শিল্পটি স্থবির হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ করে আমরা দেখছি স্থানীয় বাজারে রেবারস এবং স্ক্র্যাপের প্রচুর চাহিদা দেখতে পেয়েছি। চাহিদা মেটানোর জন্য শিপব্রেকাররা বেশি দামে জাহাজ কিনছেন বলেও তিনি জানান।
সীতাকুন্ডে রিসাইক্লিং জাহাজ আমদানীকারক গোল্ডেন আয়রনের পরিচালক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম বলেন, বুধবার বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপের দাম টনপ্রতি ছিল ৪৩০-৪৫০ ডলার এবং স্ক্র্যাপ জাহাজের দাম ছিল প্রায় ৪০০ ডলার। মহামারীর কারণে দেশজুড়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। তবে এখন অনেক নির্মাণ কাজ চলছে। তাই স্থানীয় বাজারে ইস্পাতের ভালো চাহিদা রয়েছে। তবে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও আন্তর্জাতিক স্ক্র্যাপের বাজারে উভয়ের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে।
নির্মাতারা অবশ্য ইস্পাতের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে রড উৎপাদনের কাঁচামালের বর্ধিত মূল্যের কথা উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৭০ লাখ টন ইস্পাত পণ্য উৎপাদন করে এবং এর জন্য বছরে ৪.২ মিলিয়ন টন স্ক্র্যাপ এবং বিলেট আমদানি করতে হয়।
শিপব্রেকারদের মতে, কোভিড মহামারীর কারণে এবছর স্ক্র্যাপ জাহাজের আমদানি হ্রাস হওয়ায় স্থানীয় স্ক্র্যাপের বাজারও অস্থির। ফলে ২০২০ সালের নভেম্বরে ১৮ লাখ টন থেকে কমে ১৭ মিলিয়ন টন স্ক্র্যাপ আমদানি হয়।