‘অভিভাবক হিসেবে আমরা ব্যর্থ’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগেরে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে না পারায় নিজেদের কাঁধে দায় তুলে নিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বুয়েটের শিক্ষক সমিতির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ বললেন, “অভিভাবক হিসেবে আমরা ব্যর্থ। আমরা সবাই-- শিক্ষকরা এবং কর্তৃপক্ষও। আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন তিনি। এ সময় তিনি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অধ্যাপক মাসুদ আরও বলেন, “আমাদের একজন ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল। আবরারের মতো বয়সের সন্তান আমাদের অনেকেরই রয়েছে। ওর মৃত্যুটা আমাদের এতই কষ্ট দিয়েছে যেন মনে হচ্ছে নিজের সন্তানকে হারিয়েছি।”
বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের মতো বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আবরারের মৃত্যু এই ব্যর্থতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি জানালেন, “র্যাগিং বুয়েট ক্যাম্পাসে নতুন বিষয় নয়। অতীতেও অনেক শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছে। কিন্তু কর্তপক্ষ কিছু করতে পারেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেবার দায়িত্বে, এ কথার উল্লেখ করে প্রফেসর মাসুদ বলেন, “আবরারের মৃত্যু তাদের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে।”
এ সময়, বুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ মোস্তফা আলীও আবরারের খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।
বুধবার সকালে তাঁরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও জানান অধ্যাপক মোস্তফা।
উল্লেখ্য যে, বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপল-ই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে (২১) রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে বুয়েটের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাসুক এলাহী তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে জানা যায়, ছাত্র শিবিরের সঙ্গে আরবারের সম্পর্ক রয়েছে এ সন্দেহ থেকে আবরারকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী।
ময়না তদন্তে জানা যায়, আবরারের শরীরে অসংখ্য জখমের দাগ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যান তিনি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দু'টি সমালোচনামূলক পোস্ট দেন আবরার। ভিন্নমত প্রকাশের দায়েই আবরারকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ।
আবরারের নির্মম মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তাল হযে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে গ্রেপ্তার ও অবিলম্বে শাস্তি দেওয়াসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তারা জানিয়েছেন।