চাকরিসন্ধানীদের দক্ষতা প্রশিক্ষণে অনীহা বিপদ সংকেত
প্রবাসে চাকরিক্ষত্রে উচ্চ দক্ষতাই ভালো পদে ও বেতনে চাকরি নিশ্চিত করতে পারে। তবে বিদেশে চাকরি সন্ধানীদের স্বল্প অংশই দেশ ছাড়ার আগে দক্ষতার প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন।
গবেষণা সংস্থা আইসোশ্যালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশিক্ষণে অনাগ্রহের সাথে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষার স্তরের সম্পর্ক আছে। অনেকেই প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু করলেও তারা প্রশিক্ষণের সনদ গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন নয়। এর পেছনে প্রবাসে চাকরিক্ষেত্রে দক্ষতা প্রশিক্ষণের সনদের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে সচেতনতার অভাব দায়ী বলে গবেষণায় বলা হয়।
বিদেশ ফেরত অভিবাসীদের ওপর চালানো 'রিটার্নি মাইগ্রেন্টস প্রোফাইল অ্যান্ড নিডস অ্যাসেসমেন্ট' শীর্ষক এ গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ২৩ শতাংশ দেশ ছাড়ার আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নারীদের মধ্যেই প্রশিক্ষণ গ্রহণের হার কম বলেও উঠে আসে গবেষনায়।
দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে চাকরিক্ষেত্রে অন্যান্যদের চেয়ে বেতনের উল্লেখযোগ্য পার্থক্যও দেখা যায়। প্রতিমাসে অন্তত ১০ হাজার টাকার বেতনের পার্থক্য দেখা গেছে বলে জানানো হয় গবেষণাটিতে।
তবে বহির্বিশ্বের দেশগুলোতে চাকরিক্ষেত্রে দক্ষতা প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অবগত আছেন বেশিরভাগ অভিবাসীই। গবেষণা চালানো অভিবাসীদের পুরুষদের মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ৫৪ শতাংশ, নারীদের মধ্যে এ হার ৪৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তারা সকলেই মনে করেন তাদের চাকরিক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কারণে তারা উপকৃত হয়েছেন।
প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী ও পুরুষ জানিয়েছেন, তারা কোনো সনদ গ্রহণ না করলেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করেছেন বা তাদের আগের দক্ষতার আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার এক তরুণ জানিয়েছেন, তিনি ৬ বছর আগে সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগেই দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের সনদের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই তিনি সাভারে ইলেকট্রিসিয়ানের দক্ষতা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি জানান,
"সিঙ্গাপুরে কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে এ প্রশিক্ষণ আমাকে সাহায্য করেছে। তবে এটিই যথেষ্ট ছিলনা, বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরুর আগে আমাকে সহকারী হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ তরুণ জানান, তিনি একটি ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানে কাজ নিয়ে সিলিং ও পার্টিশনের কাজ শিখেছেন। এবছরের দেশে আসার আগে তিনি সিঙ্গাপুরে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিয়ে ড্রাইভিং সনদও নিয়েছেন। সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইট চালু হলেই সিঙ্গাপুর গিয়ে নতুন নিয়োগকর্তাদের অধীনে কাজ করার অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি।
গবেষণাটিতে বলা হয়, 'শিক্ষা অর্জনের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগ্রহের হার বৃদ্ধির সম্পর্ক লক্ষ করা গেছে।' উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা অভিবাসীদের মধ্যেই দেশে বা বিদেশে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য পরবর্তী প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।
দক্ষতা প্রশিক্ষণের আগ্রহের অভাবকে বিপদ ঘন্টা হিসেবে অভিহিত করে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয় গবেষণাটিতে। চাকরি সন্ধানীদের বিদেশ গমনের আগে দক্ষতা প্রশিক্ষণ সনদ বাধ্যতামূলক করার পরামর্শও দেয়া হয় গবেষণায়।
গবেষণাটিতে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ অভিবাসীই আবার বিদেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের বেশিই চাকরির চেয়ে ব্যবসায়ী উদ্যোগ শুরু করার ব্যাপারে আগ্রহী। এদের মধ্যে যারা দেশেই থেকে যেতে চান, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহী।
অভিবাসীদের মধ্যে ব্যবসায়ে আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে পর্যাপ্ত উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও নতুন উদ্যোগে অর্থায়নের সুবিধা সৃষ্টির পরামর্শও দিয়েছে আইসোশ্যাল।