রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় জমজমাট চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের ফুড কালচারকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম নগরীতে বারকোড ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেন তরুণ উদ্যোক্তা মনজুরুল হক ।
সাত বছরের ব্যবধানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এই উদ্যোক্তা গড়ে তোলেন মেজ্জান হাইলে আইয়্যুন, বীর চট্টলা, বারগুইচ টাউন, বারকোড জিইসি, বারকোড মেরিনা ক্যাপেলা, বারকোডিয়ান এর ১৩ টি শাখা।
চার কর্মী নিয়ে পথচলা শুরু হলেও বর্তমানে এসব রেস্টুরেন্টে ৩ শতাধিক জনবল কাজ করছেন ।
চট্টগ্রাম নগরীতে গত ১০ বছরে বারকোড, বীর চট্টলা রেস্টুরেন্ট এর মতো গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক রেস্টুরেন্ট। এসব রেস্টুরেন্ট বর্তমানে উদ্যোক্তাদের মোট বিনিয়োগর পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। নানা স্থাপত্য শৈলীতে গড়া এসব রেস্টুরেন্ট দেশি-বিদেশি নানা মুখরোচক খাবার পরিবেশনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্যবসার পরিধি।
উইন্ড অব চেইঞ্জ- রুফটপ মিউজিক লাউঞ্জ এন্ড মাল্টি কুইজিন রেস্টুরেন্ট এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ রুম্মান আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন কেবল খাবার পরিবেশনই নয়, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ক্রেতা টানতে রেস্টুরেন্টগুলো সাজানো হচ্ছে স্থাপত্য শৈলীতে। ক্রেতাদের আগ্রহের কারণেই মূলত রেস্টুরেন্ট এর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব রেস্টুরেন্টের গ্রাহকদের বড় একটি অংশ তরুণ প্রজন্ম। এছাড়া পারিবারিক অবসর বিনোদনের একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ। তাছাড়া বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রণোদনামূলক অনুষ্ঠান, জন্মদিন, বিয়ে সহ সামাজিক অনুষ্ঠানও হচ্ছে রেস্টুরেন্টে। অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হোম ডেলিভারি দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসার বিস্তৃতি আরো বেড়েছে।
চট্টগ্রামের নাম করা রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম স্যাগাফ্রেডো, হান্ডি, থাই এন্ড পাই, তাবা, ক্যাপসিকাম, হালদি এরাবিয়ান, বনজোর, চিটাগাং লাউঞ্জ, মেরিডিয়ান, বেল পেপার, লিটল এশিয়া, আফগান, ক্যাফে মিলানো, ফুড এভিনিউ, সাহেব বাবুর বৈঠক খানা, দাওয়াত, দমফুঁক, রোদেলা বিকেল, তেরাকোটা, সাব জিরো, রয়েল হাট, কাঠ কয়লা, কড়াই, প্যাভিলিয়ন, জোক রেস্টুরেন্ট, দ্য আরস্থ, ইমপালা, লা এরিস্টোক্রেসি, ইট এন্ড ট্রিট, চট্রোমেট্রো, রিগ্যালো, দিল্লী দরবার, কাই রেস্টুরেন্ট, দ্য লেমন্ড গ্রাস, দ্য ভিলেইজ, কাশবন, জামান রেস্টুরেন্ট ।
গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড, এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, চকবাজার, শিল্পকলা একাডেমি, জামালখান, নিউ মার্কেট, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট এলাকায় সবেচেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন শপিং মলেও রয়েছে ফুড কোড।
ইতালিয়ান ফ্র্যাঞ্চাইজি রেস্টুরেন্ট সেগাফ্রেডো এসপ্রেসো চিটাগং এর স্বত্বাধিকারী ও এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত বলেন, আকার ভেদে এক একটি ফাইন ডাইনিং রেস্টুরেন্টে ২০ জন থেকে ১০০ জন কর্মী কাজ করে। সেই হিসেবে চট্টগ্রামে ৫ শ রেস্টুরেন্টে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার কর্মী রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে অন্যান্য ব্যবসার মতো এই সেক্টরে স্থবিরতা নেমে এলেও বর্তমানে আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা।
কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফুল আহছান রাকিব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম নগরীর একে খান মোড়ে চালু করি কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরা। ব্যাপক সাড়া পেয়ে ২০১৬ সালে কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরার অলংকার শাখা, ২০১৯ সাল চকবাজার এবং ওয়াসা মোড শাখার উদ্বাধন করা হয়। প্রতিটি শাখায় আমাদের মুলধন প্রায় ৫ কোটি টাকা । শীঘ্রই চট্টগ্রাম নগরীতে আরো ৪ টি শাখা উদ্বোধনের পরিকল্পনা আছে আমাদের।
এদিকে নগরীর ৫ শতাধিক রেস্টুরেন্ট ছাড়াও অরো অন্তত ৪ শ হোটেল রেস্তোরা রয়েছে। সেগুলোতেও বিক্রি হচ্ছে মুখরোচক খাবার।
বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল হান্নান বাবু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত ১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে খাবারের হোটেলের পাশাপাশি মিনি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এসব হোটেলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানী স্বাদের গরুর মাংশের ব্যাপক চাহিদা। নগরীতে আমাদের সংগঠনের তালিকাভুক্ত ২৬১ টি খাবার হোটেল রেস্তোরা রয়েছে। সদস্যের বাইরে আছে আরো অন্তত ১৫০ টি হোটেল রেস্তোরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর এবং বিভিন্ন উপজেলায় রেষ্টুরেণ্ট এর লাইসেন্স নিয়েছে ২৬৪ টি রেস্টুরেন্ট। এর অধিকাংশ চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডার স্থান সংকুচিত হয়ে এসেছে। রেস্টুরেন্ট আড্ডার পাশাপাশি অল্প খরচে খাওয়ার সুযোগ থাকায় তরুণ প্রজন্ম রেস্টুরেন্টমুখী হয়েছে।