চীনের মেদাধিক্যের হার আমেরিকার জনসংখ্যাকে ছাড়িয়েছে!
ধনীদের তালিকায় যেভাবে তরতরিয়ে শীর্ষে উঠে যাচ্ছে চীন সেভাবে স্থুলতা এবং ওজনের আধিক্যের খাতায় শীর্ষে নাম লেখাতে যাচ্ছে দেশটি।
আর এ বিষয়ে এগিয়ে আছে চীনের প্রাপ্তবয়স্করা। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মাত্রাতিরিক্ত অজনে ভুগছে।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটির স্থুলতার হার গত দুই দশকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে,২০০২ সালে ৭.১% এই বছর বেড়ে ১৬.৪% এ এসেছে। তাদের স্থুলতার হার গোটা আমেরিকার জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
২০০২ এ মেদবহুল প্রাপ্তবয়স্কদের হার ছিলো ২৯.৯% যা ২০১২ তে গিয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছি ৪২%। রিপোর্ট অনুযায়ী,তাদের মধ্যে ৫০.৭% মানুষই প্রাপ্তবয়স্ক।
লি বিন , জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সহকারী পরিচালক বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, " স্থুলতা এবং মাত্রাতিরিক্ত ওজন নিয়ে এক মারাত্মক সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আছি আমরা।গ্রাম এবং শহর সবখানেই এই সমস্যা দিন দিন শুধু বেড়েই চলছে। "
দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খাদ্য এবং খাদ্যাভাসের যে বিশাল পরিবর্তন এসেছে তা আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে এর জন্য।
১৯৫০ এবং ৬০ এর দশকের দুর্ভিক্ষে আনুমানিক মৃত্যু সংখ্যা ৪৫ মিলিয়ন এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চাল, তেল, ডিম এবং মাংসের মতো প্রধান খাদ্যগুলোর জন্য জনগণকে সরকারী বিতরণকৃত খাবার ব্যবহার করতে হতো। দীর্ঘদিন দেশটিতে খাদ্য সঙ্কট থাকার পর এখন, চাইনিজরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী ইচ্ছেমত খেতে পারে। তাছাড়া দেশটির এই পরাক্রমশালী হয়ে ওঠার জন্য দেশটির খাদ্য ভাণ্ডারেও যথেষ্ঠ পুষ্টি ও ক্যালোরি যোগ হয়েছে।
সব ভালোর মাঝে কিছু খারাপ থাকে।চীনের বেলায়ও তাই । দিনদিন ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হয়ে ওঠাই দেশটিতে খাদ্য অপচয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাইনিজ প্রেসিডেন্ট শিন জিনপিং বিষয়টিকে "হতবাক ও বিরক্তিকর" বলে অভিহিত করেছেন। গত মঙ্গলবার, দেশের জাতীয় আইনসভায়, খাদ্য বর্জ্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত একটি খসড়া আইন জমা দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলত্বের হার জনস্বাস্থ্যের জন্য তৈরি করে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলো জানায়, অতিরিক্ত ওজন, জনস্বাস্থ্যের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এবং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদপিণ্ডের সমস্যা এবং স্ট্রোক সহ মারাত্মক রোগ এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় ।
চীনা রোগ ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রধান পুষ্টিবিদ ঝাও ওয়েনহুয়া বলেছেন, "চীনা অধিবাসীদের এই অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলত্বের হার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বেড়ে চলেছে যা সমস্ত গোষ্ঠীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিষয়টি এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে,"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে,প্রতিবছর অন্তত ৪ মিলিয়ন মানুষ এই স্থুলতা এবং অতিরিক্ত ওজনের জন্য মৃত্যুবরণ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুসারে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী, স্থূলত্ব প্রায় তিনগুণ বেড়েছে ।২০১৬ তে ১.৯ মিলিয়ন মানুষ বেশি ওজনের এবং ৬৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ স্থুলতায় ভুগেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থুলতায় ভুগেছেন ৭১% প্রাপ্তবয়স্ক। তবে এই পরিমাপে চীনের মাপকাঠি বৈশ্বিক মানের তুলনায় কঠোর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি শারীরিক পরিমাপকে(বিএমআই), শারীরিক উচ্চতার অনুপাতের সাথে ওজনের অনুপাত বের করা হয়। ২৫ এর বেশি ওজনকে মাত্রাতিরিক্ত ওজন এবং ৩০ এর চেয়ে বেশি হলে স্থুলতা হিসেবে ধরা হয় সেখানে।
চীনে ২৪ এর চেয়ে বেশি বাড়তি ওজন এবং ২৮ এর চেয়ে বেশি হলে স্থুলতা হিসেবে ধরা হয়।