ভারতে থাবা বিস্তার করছে জেএমবি
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামাত-উল-মুজাহিদীন (জেএমবি) ভারতে এর দাঁত-নখ বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে সতর্ক করেছেন সেদেশের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির প্রধান ইয়োগেশ চন্দর মোদি।
সোমবার ভারতের বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াডের প্রধানদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ওয়াই সি মোদি জানান, ঝাড়খণ্ড, বিহার, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও কেরালার মতো রাজ্যগুলোতে এই জঙ্গি সংগঠন নিজেদের কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) কয়েকটি রাজ্য সরকারের কাছে ১২৫ সন্দেহভাজন জঙ্গির একটি তালিকাও তুলে দিয়েছে বলে জানান মোদি।
বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের বিভিন্ন সূত্র খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশে জেএমবি নামের জঙ্গি গ্রুপটি নিষিদ্ধ ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের পর, গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় কিছু সদস্য দেশ ছেড়ে চলে যান বলে জানান পুলিশের অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের একজন পরিদর্শক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, “২০০৮ সালে জেএমবি পশ্চিমবঙ্গে এর কার্যক্রম শুরু করে। এর আগে গ্রুপের দুজন শীর্ষনেতা, সালাহউদ্দিন সালেহ ও জাহিদুল ইসলাম মিজান, ওরফে বোমা মিজান বাংলাদেশে বিচার ও শাস্তি এড়াতে ভারতে পালিয়ে যান।”
তিনি আরও জানান, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার বছর খানেক পর বাংলাদেশে চালানো সিরিজ বোমা হামলার জন্য দায়ী ছিলেন এই দুই জঙ্গি নেতা।
পরে তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের আখড়া গড়ে তুলে সদস্য তৈরি করেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেবারও ব্যবস্থা করেন।
সম্প্রতি এই জঙ্গি গ্রুপটি ভারতের আরও কয়েকটি জায়গায় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাতে চাচ্ছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জানিয়েছেন, জেমএমবি নেতারা ‘ঘাজওয়া-ই-হিন্দ’প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দৃঢ় আশাবাদী। ‘ঘাজওয়া-ই-হিন্দ’ হল ভারতে মুসলিমদের চূড়ান্ত বিজয়।
“তারা মনে করে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে। সেজন্যই সম্ভবত ওরা ভারতে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়াচ্ছে”-- বললেন বাংলাদেশ পুলিশের ওই শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি গত দশ বছর ধরে জেএমবির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।
তাঁর কাছে জানা গেল, বোমা মিজান গত বছর ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন সেখানে সালাহউদ্দিন ভারপ্রাপ্ত ‘আমির’ হিসেবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম, জামালপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও বগুড়াসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে এই জঙ্গিদের বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। ওরা বাংলাদেশেও আবার সংগঠিত হতে চেষ্টা করছে।
তবে কর্মকর্তা জানালেন, ওইসব এলাকায় জেএমবি সদস্যদের কাজকর্ম তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
ভারতের ভেতরে কাজ করছে যেসব জঙ্গি, তারা বাংলাদেশে তাদের অনুসারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড় এলাকায় এক বিস্ফোরণে একটি বাড়ি উড়ে যায়। এতে সন্দেহভাজন দুজন জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ওই উপ-কমিশনার জানান, “জামাত-উল-মুজাহিদিন (জেএমবি) এজন্য দায়ী। ওরা বিস্ফোরণ ঘটাতে চায়নি সেখানে, পরীক্ষার সময় দুর্ঘটনাক্রমে ঘটেছে।”
তিনি জানান, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরপরই তাদের দেশে জেএমবির তৎপরতার কথা জানতে পারে।
তবে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
একই ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি।
জেএমবি নিয়ে যা বলছে ভারতের এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি)
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, এনআইএ প্রধান ওয়াই সি মোদি সোমবারের আলোচনায় সন্দেহভাজন ১২৫ জঙ্গির নামের তালিকা রাজ্যগুলোকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বলেন যে, জেএমবি নেতাদের সঙ্গে এই জঙ্গিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
এনআইএ-এর পুলিশের মহাপরিদর্শক অলোক মিত্তাল অবশ্য বলেছেন, রাজ্যগুলোতে পাঠানো তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের সংখ্যা ১৩০।
মিত্তাল বলেন, ২০০৭ সালে জেএমবি ভারতে কর্মকাণ্ড শুরু করে। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে ওদের তৎপরতা শুরু হয়। পরে অন্য রাজ্যগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জেএমবি ব্যাঙ্গালুরুর ২০ থেকে ২২টি জায়গায় তাদের আস্তানা বানায়। এখন ওরা দক্ষিণ এশিয়ায় ডালপালা বিস্তারের চেষ্টা করছে।
জেএমবি সদস্যরা এমনকি কর্ণাটকের সীমান্তে কৃষ্ণগিরির পাহাড়ে রকেট লঞ্চারের একটি পরীক্ষা চালিয়েছে বলেও জানান ভারতীয় পুলিশের এই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিশোধ নিতে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে ওরা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।