কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে তুহিনকে জবাই করেন বাবা
রোববার রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ছেলে তুহিন হাসানকে (৫) কোলে নিয়েই ঘুম পাড়ান বাবা আবদুল বাছির। কিন্তু মধ্যরাতে সেই বাবাই আবার ঘুমন্ত সন্তানকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান। ভাই আবদুল মছব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে ছেলেকে জবাই করেন।
এটুকুতেই শেষ নয়, হতভাগ্য শিশুটির কান ও লিঙ্গ কেটে তাকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেন বাবা ও চাচা মিলে। এরপর দুটি ছুরিতে প্রতিপক্ষের নাম লিখে সেগুলো শিশুটির পেটে গেঁথে দেন।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে চাঞ্চল্যকর তুহিন হত্যার ঘটনায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার বাবা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিকালে এ কথা জানান।
আদালতে নিজেদের দায় স্বীকার করে তুহিনের চাচা আবদুল মুছাব্বির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তুহিন হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা গেছে দাবি করলেও কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ধারণা করছি প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এ বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত সবকিছু পেয়ে যাব।’
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার পেটে দুটি ধারালো ছুরি বিদ্ধ ছিল। পুরো শরীর ছিল রক্তাক্ত। কান ও লিঙ্গ কাটা ছিল। পেটে বিদ্ধ দুটি ছুরিতে ওই গ্রামের বাসিন্দা ছালাতুল ও সোলেমানের নাম লেখা ছিল। তাদের ফাঁসাতে এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে বলে প্রথম থেকেই ধারণা করে আসছেন এলাকাবাসী।
কয়েক জন স্থানীয়র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেজাউরা গ্রামের সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে নিহত তুহিনের বাবা আবদুল বাছিরের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। ছালাতুল ও সোলেমান সাবেক মেম্বার আনোয়ার হোসেনের লোক।
এদিকে, সোমবার সকালে তুহিনের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই দেশজুড়ে আলোচিত হতে থাকে ঘটনাটি। এমন বীভৎস কায়দায় একটি শিশুকে হত্যার ঘটনায় সমালোচনা দেখা দেয় সর্বস্তরে।
পুলিশও এ ঘটনার তদন্তে তৎপর হয়ে ওঠে। নিহত শিশুর পরিবারের সদস্যদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সোমবার দুপুরেই তুহিনের বাবা আবদুল বাছির, চাচা আবদুল মুছাব্বির, ইয়াছির উদ্দিন, চাচাতো ভাই শাহারিয়ার, প্রতিবেশি আজিজুল ইসলাম, চাচি খাইরুল নেছা ও চাচাতো বোন তানিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
ওদিকে, তুহিন হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন। বিকালে থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডে ‘তুহিনের পরিবারের কয়েক সদস্যের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে’ বলে জানান।
এ সময় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহার আদালতে আসামিদের ৫ জনকে তোলা হয়। আবদুর বাছির, আবদুর মুছাব্বির এবং জমশেদ আলীর ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।