করোনাভাইরাস: খাদ্য সংক্রান্ত যে পাঁচ উপসর্গের কথা জানিয়েছেন রোগীরা
বিদায়ী বছর জুড়ে কালো ছায়া ফেলেছিল কোভিড-১৯ ব্যাধি, একথা অধিকাংশেই মানবেন। সর্ব-সাধারণের যাপিত-জীবন প্রায় তছনছ করে ছাড়ে নতুন করোনাভাইরাস সৃষ্ট রোগটি। আক্রান্ত বা সুস্থ সকলেই এক রকম স্ব-আরোপিত বিচ্ছিন্নতায় বাসে বাধ্য হন, অনেকে এখনও হচ্ছেন।
তাছাড়া নিত্য-নতুন উপসর্গের উদ্ভব, সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অতি-সাম্প্রতিক কালে জীবাণুর নতুন ধরনের বিস্তার লাভের ভয়; আতঙ্কের সীমায় রেখেছে বিশ্ববাসীকে।
সুখবর হলো; ধীরে ধীরে আমরা টিকার অনুমোদন ও প্রয়োগ লক্ষ্য করছি। আশা করা যাচ্ছে, অচিরে বাংলাদেশেও কিছু মানুষ এর আওতায় আসবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রথম পর্যায়ে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশকে টিকাদানের আওতায় আনার ব্যাপারেও জানিয়েছেন। তবে তাতে দূর হচ্ছে না বায়ুবাহিত এই জীবাণুর ঝুঁকি। বাতাসে ভেসে সক্রিয় থাকতে সক্ষম এ জীবাণু কখন কাকে সংক্রমিত করবে, তা অনুমান করা সহজ নয়।
আর এই শীতকালে মৌসুম পরিবর্তন বা ঠাণ্ডার তোড়ে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি সকলেরই হয়। ফুসফুসের অন্যান্য ব্যাধির মতো এসব উপসর্গ কোভিড-১৯ সংক্রমণেও স্বাভাবিক ঘটনা। তাই অন্যকিছু উপসর্গ জানলে সতর্ক থাকায় একটু বেশি সাহায্য পাব আমরা। বিশেষ করে, এমন কিছু উপসর্গ যা কোভিড আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
আলোচিত সে উপসর্গগুলো আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্য গ্রহণের ফলে তৈরি হওয়া শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। জীবাণু সংক্রমিতদের মধ্যে খাদ্যের এই প্রভাব খুবই সাধারণ ঘটনা। তবে কোভিড রোগীরা খাদ্য নিয়ে যেসব উপসর্গের কথা জানিয়েছেন সেগুলোই এখানে তুলে ধরা হলো:
অন্ত্রনালীর সমস্যা:
রোগী পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে করা এক গবেষণায় তিনটি চীনা হাসপাতাল জানায়, প্রতি ৫ জনে ১ জন কোভিড রোগী খাদ্যগ্রহণের ফলে পরিপাকতন্ত্রের নানা সমস্যা যেমন; বমি হওয়া, ডায়রিয়া এবং পেটের ব্যথায় ভোগেন।
কোভিড-১৯ যে অন্ত্রনালীতে থাকা অণুজীবের ওপর প্রভাব ফেলে সেই সংক্রান্ত কিছু যোগসূত্রের ইঙ্গিতও দিয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। আর মানব বর্জ্যের মাধ্যমে যে রোগটি ছড়াতে পারে, সেব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এসব উপসর্গ থাকা মানেই কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তা নয়, তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আপনার উচিৎ হবে পৃথক বাথরুম ব্যবহার করা।
তাছাড়া, আগে থেকেই যারা অন্ত্রনালীর সমস্যায় ভুগছেন তাদের শরীর থেকে জীবাণু দূর হতে বেশি সময় লাগে। সংখ্যাভিত্তিক উপাত্তে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
রুচি হারানো:
যেকোনো রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংক্রমণে খাওয়ার রুচি কমে যাওয়াও একটি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু, কোভিডে খাদ্যে অনীহা সৃষ্টি হতে পারে মারাত্মক রকমের। এমন অবস্থায় খুব সাধারণ খাবারেও বিতৃষ্ণা জন্মে অনেকের। বিশেষ করে, যারা গন্ধ বা স্বাদের অনুভূতি হারান তাদের জন্য সামান্য খাওয়াও হয়ে পরে বেশ কঠিন।
বিশেষ করে, গন্ধ আর জিহ্বায় স্বাদের অনুভূটি হারানোদের মধ্যে একটি বিষয় থাকে লক্ষ্যণীয়। তারা সাধারণত, যেসব খাবার খেতে বেশি পছন্দ করেন, সেগুলোই তখন তাদের মধ্যে বিতৃষ্ণার জন্ম দেয়। অ্যানোস্মিয়া এবং অ্যাফাজিয়া নামের এই দুই সমস্যায় ভোগাদের খাদ্য আস্বাদনের স্নায়ুগ্রন্থি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে। ফলে কম খাদ্যগ্রহণে রোগীর শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
চীনে করা আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমণের অনেকদিন পর পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর খাবারে রুচি থাকে না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তাদের মধ্যে ওজন কমা এবং বদহজমের মতো সমস্যাও দেখা গেছে।
তবে আপনি যদি আক্রান্ত হয়ে অরুচির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তি হন, তাহলে বেশি করে সবুজ চা পান করতে পারেন। সবুজ চায়ের রাসায়নিক সার্স কোভ-২ জীবাণুর এনজাইমের ক্রিয়া বন্ধ করার ক্ষমতাসম্পন্ন। এই পানীয় একইসঙ্গে আপনার শরীরে পানির চাহিদা কিছুটা হলেও পুরণ করবে।
বমিবমি ভাব:
ডায়রিয়া এবং খাদ্যে অরুচির মতো বমিভাবও কোভিডের একটি সাধারণ লক্ষ্মণ। তবে কিছুটা দেরিতেই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় চিকিৎসা বিজ্ঞান।
উহানে ১৩৮ জন রোগীর মধ্যে চালানো এক গবেষণায় দেখা যায়, তাদের ১০ শতাংশ ডায়রিয়া এবং বমিভাবে ভুগছেন। জ্বর আসার দুদিন আগে লক্ষ্মণ দুটির দেখা মেলে। বেশিরভাগের ক্ষেত্রে এটা ছিল সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষ্মণ আর কারো কারো ক্ষেত্রে তা ছিল সংক্রমণের তীব্রতার চিহ্ন।
তাই বমিভাব এবং ডায়রিয়া দেখা দিলে এবং ইতোপূর্বে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এমন কারো সঙ্গে দেখা করে থাকলে, দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গলা ব্যথা:
গলায় খসখসে বা হালকা ব্যথার অনুভূতি সহজেই সর্দি বা সাধারণ ফ্লু হিসেবে গুলিয়ে ফেলা সম্ভব। শেষরাতে আইসক্রিম খাওয়া বা দূষিত আবহাওয়ার প্রভাবেও এমনটা হতে পারে। আবার, কোভিড-১৯ হলেও তা হতে পারে। অর্থাৎ, জীবাণু আপনার গলায় বেশি সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এরফলেও খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের অনীহা তৈরি হয়। এতে শ্বাসনালীর মধ্যেও অস্বস্তিকর অনুভূতি বোধ হয় বা খাওয়ার সময় ব্যথা ব্যথা লাগে। ঘরে তৈরি কিছু উপাদান এটি সারাতে পারে, তবে কোভিডের অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াটাই উত্তম।
স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারিয়ে ফেলা:
আকস্মিক স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো কোভিড-১৯ এর প্রধানতম উপসর্গ। আক্রান্ত হওয়ার দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগী এর শিকার হতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মতে, স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি হারানো কোনো ব্যথার জন্ম দেয় না বা তা খুব গুরুতরও নয়। তবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে অনেকদিন লাগতে পারে। আর রোগীর মানসিক জগতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে এমন অনুভূতি শূন্যতা।
প্রচলিত কোনো চিকিৎসা না থাকায় সিডিসি তাদের গন্ধ চেনার বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং ঘ্রাণ চিকিৎসায় ব্যবহৃত সুগন্ধী তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। এসব উপকরণ মস্তিষ্কে পুরনো ও পরিচিত গন্ধের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
- সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া